একটি তিন পাতার ইন্টারভিউয়ের পর..

একটি তিন পাতার ইন্টারভিউয়ের পর..

নতুন প্রফেশন। সাংবাদিকতায় সূর্যোদয়ে সবই আজব ঠেকে। অফিসে এইটুকু হয়ে থাকি। সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের ট্যাঁশগরু আর ঢ্যাঁড়শদের দাবড়ানির চোটে। অফিস পার্টিতে গোটা টলিউডই হাজির। চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। সবে এমএ পাশ করে ইউনিভার্সিটি-সাম্রাজ্যের গন্ডি পেরিয়েছি। আমি এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিভার লিলিফুল হয়ে ফুটে থাকব, আমাকে সবাই চিনে নেবে। এই মোটো নিয়েই দাঁড়িয়ে আছি। এগিয়ে যাচ্ছি না কারুর দিকে। ঝকমকি ড্রেস-শাড়ি, পরচুলো আর ওয়াইন গ্লাসে-ভিজে ঠোঁট, কাঁচভাঙার-মতো-আওয়াজ-করা হাসির ভিড়ে দেখতে পেয়ে গেলাম পদ্মপাঁপড়ি-চোখ, টিয়াপাখি-নাক। সুন্দরী উঠতি নায়িকা কথা বলছেন কার সঙ্গে। পেছনে দাঁড়িয়ে মা। কী মনে হল, নাম ধরে ডেকে এগিয়ে এলাম। হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিল নায়িকা। পাঁচ মিনিট পরেই খুদে নায়িকাকে কে ডেকে উঠল ভিড়ের ভেতর থেকে। নায়িকা আমার দিকে ফিরে বলল, "তুমি যদি ব্যস্ত না থাকো, তুমিও আমার সঙ্গে চলো না!" বললাম, "হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।" মিনিট পনেরো বেশ গল্পসল্প করে কাটিয়ে দিলাম। নম্বরটাও এক্সচেঞ্জ করে নিলাম।

বাড়ি পৌঁছলাম রাত এগারোটা। দেখি মোবাইল স্ক্রিনে মিটমিটে আলো। নায়িকার নম্বর। ধরে বললাম, হ্যালো, বলো..
-বাড়ি পৌঁছছো?
-হ্যাঁ হ্যাঁ।
-এত রাতে ট্রেনে করে ফিরলে। এত কষ্ট করে এত দূর...ভাবলাম একবার খবর নিই।
-থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
-তোমাকে খুব ভাল লেগেছে। ভাল থেকো আর চুলটা কোনওদিন কেটো না।
-একদিন তোমার ইন্টারভিউ নিতে যাব।
-এসো এসো খুব মজা করব!
আমি লিলিফুল হয়ে ফুটতে চাইলাম। ফুলকলি বলে কেউ পাত্তাই দিল না এ অফিসে। অন্য অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। ইন্টারভিউ বোর্ডের হোমরা-চোমরারা জিজ্ঞেস করল,
-এন্টারটেনমেন্ট বিট করবে, টালিগঞ্জে কাউকে চেনো?
আলটপকা নামটা মনে পড়ে গেল, বলেও দিলাম। ততদিনে সেই নায়িকা আর নতুন নেই। গত বছরই বেশ কয়েকটা হিট দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠিত নায়িকাদের থ্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
-ও আমার বুজম ফ্রেন্ড।
-বাঃ, ওর সঙ্গে আমারও অনেকদিনের আলাপ। কথা হয়নি কিছুদিন? কেমন আছে ও?
এক চশমাধারী দিদির প্রশ্ন।
এইরে! কেমন আছে তা তো জানি না। বাঙালিসুলভ উত্তর দিই- ভালই তো!
- ও নেক্সট ফিল্মটা কী করছে যেন..? চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করলেন সেই দিদি
খবর কাগজের সাপ্লিমেন্টটা বেরোবার সময় চোখ বুলিয়েছিলাম। ম্যানেজ করে নিলাম পরের চারপাঁচটা প্রশ্ন।

বেরনোর পর খেয়াল করলাম, অন্তত আট মাস কথা হয়নি। আর কি ফোন করা যায়? থাক গে। আবার ভাবলাম, না করলে ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকগুলো যদি ক্রস-ভেরিফিকেশন করে? তাহলেই তো চিত্তির। মিথ্যে বললে যদি চাকরিটা হাতছাড়া হয়ে যায়! ফোনটা একবার করেই ফেলি। নাম্বার ডায়াল করি। চিনতে পারবে তো? না পারলে অ্যাটলিস্ট জানিয়ে রাখতে হবে ইন্টারভিউ বোর্ডের লোক ফোন করলে যেন... ভাবতে ভাবতে ওপারে নায়িকার গলা।
-চিনতে পারছ? আমি ফুলকলি।
-আরে------ ফুলকলি, কতদিন পর! কেমন আছ? কী করছ?- নায়িকার স্বভাবসুলভ উচ্ছ্বাস।
যাক, চিনেছে। ভেতরে একটা স্বস্তির বাতাস অনুভব করলাম।
-দিব্যি আছি। তুমি কোথায়?
-আমি তো কালিম্পং, শুটিং করছি। এখুনি লাইন কেটে যাবে। খুব টাওয়ারের অবস্থা খারাপ। ইশ... এতদিন বাদে কথা বললে যাক, ভুলে যাওনি তাহলে আমায়।
এ তো আমার কথারই প্রতিধ্বনি। যা বলতে চেয়েছিলাম, বলার আর প্রয়োজন হল না।

নতুন অফিসে ঢুকে ঠিক করলাম পেন্ডিং ইন্টারভিউটা সেরে নেব। এনটি ওয়ান-এ শুটিং হচ্ছে তাঁর নতুন ছবি। বিপরীতে নায়ক জিত্। মেক-আপরুমে নায়িকা সাজুগুজু করছেন। বাইরে থেকে ডাকলাম।
-আরে আরে এসো, আবার সেই উচ্ছ্বাস-উপচে-পড়া গলা। মুখ তুলে ডাকলেন সুন্দরী, কবে চাকরি চেঞ্জ করলে?
-হ্যাঁ, প্রথম তোমার ইন্টারভিউ নিতে এলাম।
কথা না বাড়িয়ে ভয়েস রেকর্ডার অন করি। তখনও মোবাইলে রেকর্ডিং ক্যাপাসিটি বেশি ছিল না।
-অটো চড়েছ কোনওদিন?
খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়লেন নায়িকা।
-হ্যাঁ! এটা প্রথম প্রশ্ন নাকি! অনেকবার.. অটো, মেট্রো সব। অটোর ঠিক মাঝখানের সিটে বসে টিউশন ক্লাসে গিয়েছি। মেট্রোয় চড়ে ইউনিভার্সিটি।
প্রায় চার ঘণ্টা। মনের ভেতরে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসা। গোপনচারিণীর মতো সাঁতরে এলাম নায়িকার স্মৃতির সমুদ্রে। বাংলা ছবির থোড়-বড়ি-খাড়ার বাইরে একেবারে ঘরোয়া মেয়েটিকে। মাঝে মাঝে 'ম্যাডাম শট রেডি'-র কমার্শিয়াল ব্রেক ছাড়া চড়াইপাখির মতো বকে গেলেন নায়িকা। আসার সময় নায়িকার সবিনয় অনুরোধ,
-আরেকদিন এসো।
-আসব, যেদিন তুমি 'পরিণীতা'র নায়িকা হবে। তোমার ড্রিম রোল।
-ইশশ, কী করব বলো, ছবিটা যে হয়ে গেল...
-তাতে কী? ক্লাসিক ছবি তো বার বার তৈরি হচ্ছে। এই তো সেদিন ঋতুপর্ণ ঘোষ তোমার প্রশংসা করলেন। কাগজে পড়লাম। বললেন, নতুনদের মধ্যে তুমিই সবচেয়ে ডিলিজেন্ট আর প্রমিসিং।
-সত্যি!
বিয়ের সাজে অপূর্ব সুন্দরী লাগছিল নায়িকাকে। এনটিওয়ানে সেদিন ছাদনাতলা। ফুলের গেট। বিয়ের সেট। মেক-আপ ভ্যানের ড্রেসিং টেবিলে নাকের নোলকটা খুলে রেখে আয়নার দিকে তাকালেন নায়িকা।
-কাজ করে যাই, ফলের কথা ভাবি না। পেলে তো ভালই লাগবে।
-স্নানঘরে গুনগুন করে কোন গানটা গাও বললে যেন?...

পরদিন সকালে মনপ্রাণ ঢেলে লিখে ফেললাম কপিটা। পরের ইস্যুতে যাবে। প্রিন্টাআউট নিয়ে বসের ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকে বললাম, লেখাটা হয়ে গেছে। পরের ঘটনাটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বসের মুখ হাঁড়ি। রিডিং গ্লাসের ওপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে নিলেন পাতাগুলোয়। ক্ষমাঘেন্না করে আর কি! তার পর হুম করে বললেন, -তুমি আবার টলিউডে চললে কেন? বলা হয়েছিল?
ব্যঙ্গ কেন বুঝলাম না। বললাম,
-ও আমার বন্ধু তাই...
-বন্ধু! জার্নালিজমে কেউ বন্ধু হয় নাকি? তোমায় কথাটা বের করে নিতে জানতে হবে, লোকটাকে কথা বলাতে হবে...
-বলিয়েছি। তিন ঘন্টা। দেখুন প্লিজ...
অগত্যা মন দিয়ে পড়লেন।
-হয়েছে ভালই, কিন্তু ব্যাপারটা হল গিয়ে... তুমি ইন্টারভিউ নিয়ে এসেছ শুনলে অমুক লোক মনোক্ষুণ্ণ হবে। টালিগঞ্জটা ওর এরিয়া কিনা.. আচ্ছা দাঁড়াও, দেখছি কী করা যায়।

তিন মাস 'কিছু করা' হয়নি। আমিও চুপ। ভেতরে ভেতরে লুচির মতো ফুলছি। হঠাত্ একদিন পাতা ভরানোর জন্য লেখাটার খোঁজ পড়ল। নায়িকার ছবি দিয়ে দিব্য ভরেও গেল তিন পাতা। এমন ফিট করে গেল যে, একলাইনও এডিট করতে হল না। দেখা হওয়ার ঠিক তিন মাস পরে ফোন করলাম নায়িকাকে।
- তোমার সেই ইন্টারভিউটা বের হয়েছে। এ বারের ইস্যুটা দেখো।
-কিনেছি। পড়ে তোমায় ফোন করছি।
ফোনটা পেলাম।
-দারুণ লিখেছ ফুলকলি। তোমার লেখার হাতটা কী ভাল.. আমি বাবা মা সব্বাই পড়েছি। আমার মাসিরাও খুব খুশি।
-তাই নাকি!
-একটা সত্যি কথা বলি? আমি যে এত গুছিয়ে কথা বলতে পারি, নিজেই জানতাম না।
-যা বলেছ তাই তো লিখেছি..
-স্টপ ইট ফুলকলি। আমি তো যা ইচ্ছে তাই বলেছি, তুমি কত সুন্দর লিখেছ। আর একটা কথা..-কী গো?
-তোমাকে না আমার প্রথম দিন থেকে ভাল লাগে। কী সুন্দর কথা বলো তুমি। কী ভাল লেখো। আর চুলটা কোনওদিন কেটো না।
-অত বলার দরকার নেই..
-অ্যাই তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
তখন আমি হালুমকুমারের সঙ্গে চু়টিয়ে প্রেম করছি।
-আলাপ করিয়ে দাও না একদিন..চলো চলো একদিন কফি খাই দুজনে.. প্রচুর আড্ডা মারব।
নাঃ, অফিসটাইম সামলে আর আড্ডাটা দেওয়া হয়নি কোনওদিন।

ওই তিনপাতা ইন্টারভিউয়ের পর থেকে প্রতিবারই ইন্টারভিউগুলো হাইজ্যাকড হয়ে যায়। অজানা কারণে। ফেভারিটিজম অতি বিষম বস্তু, যে ফেভারিট হতে পারে না শত করেকম্মেও, সেই মরমে বোঝে। সাত-আটমাস বাদে হঠাত্ একদিন সম্ভবত কোনও এক প্রেস কনফারেন্সে দেখা হয়ে গেল নায়িকার সঙ্গে। সে-বছর তাঁর প্রথম দুটো হিট ছবি। বাজার একেবারে হট কেকের মতো গরম। চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
-এই যে সুইটহার্ট, তুমি আজকাল আমার ইন্টারভিউ নাও না কেন?
-নিতে দেয় না অফিস। চাকরি করি তো।
-বোঝো! তাই বলে ফোনও করবে না? চলো একদিন আড্ডা দিই। আমার বাড়িতে এসো দারুণ গল্প হবে।
-বাড়িতেই যাব। খবর আছে।
-কী গো?
-গেলেই জানতে পারবে।

হালুমকুমারের সঙ্গে আমার বিয়ের ছাপানো কার্ডটা নিয়ে হাজির হলাম গল্ফ রোডের বাড়িতে। বসবার ঘরে সোফায় স্মিতহাস্যময় যে ভদ্রলোক বসে আছেন, তিনি 'ইন্টারভিউ' ছবির নায়ক। নায়িকার বাবা। বললেন,
-কী? বিয়ের নেমন্তন্ন?
ঘাড় নেড়ে বলি, হ্যাঁ। আপনাদেরও আসতে হবে।
হাসিটা আরও প্রশস্ত হয়,
-আমি যেতে পারব কি না ডায়রিটা দেখতে হবে। তোমার বন্ধু নিশ্চয়ই যাবে।
পাশে নায়িকার মা। -তোমার কথা ওর মুখে খুব শুনি। ওকেই তো বললাম, একদিন বাড়িতে ডাক।
-বাই দ্য ওয়ে, তোমার ইন্টারভিউটা খুব ভালো লেগেছিল। ভাষার ওপর বেশ দখল আছে।
বললেন নায়িকার বাবা। মাথা নিচু করে আমি বিনয়ী হওয়ার অ্যাকটিং করি।
নায়িকা নেমে আসেন সিঁড়ি দিয়ে। আবার সেই উচ্ছ্বসিত গলা।
আরর-রে! কী ব্যাপার ফুলকলি.. কী সারপ্রাইজ দেবে বলতো?
বাবাই বললেন মেয়েকে, দ্যাখ, কেমন লক্ষ্মী মেয়ের মতো বিয়ে করছে। তোর নেমন্তন্ন। মনে হচ্ছে তোর ওই সময়টা শুটিং নেই। তুই যেতে পারবি।
আরও খানিক গল্পসল্প করে উঠে পড়ি। নায়িকা বলে, একদিনও আলাপ করালে না যে..বিয়েবিয়েবিয়ের পর মনে হল ব্লাস্ট ফার্নেসে ঢুকে গেছি। আগুনে গরমে সেঁকা হচ্ছে আমাকে। কী মনে হল, একদিন রাতে বালিশ ভেজাতে ভেজাতে ফোন করলাম নায়িকাকে।
সব শুনে আঁতকে উঠল নায়িকা, যাই করো, বিয়ে ভেঙো না। তোমাদের সঙ্গে কথা বলব আমি। মনে হচ্ছে অনেক মিসকমিউনিকেশন আছে।
-কোনও মিসকমিউনিকেশন নেই। সবসময় অ্যাডজাস্ট করেছি। অ্যাডজাস্টমেন্ট আর কম্প্রোমাইজ এক জিনিস নয়।
-কম্প্রোমাইজ করতে বলব না তোমায়, জানি তুমি সেইধরনের নও।
-তোমার হাজব্যান্ড সময় দিলে আমি তোমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
-কী করে করবে? তোমার অনেক ব্যস্ততা।
-তোমার জন্য আমার সময় আছে। তুমি এত হেজিটেট করো না.. সেই মিটিং-ও হল না। তার আগেই যা অবশ্যম্ভাবী তা-ই ঘটে গেল। আইন-আদালত সামলে আবার একা হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন যাঁরা সেই তালিকায় নায়িকাও ছিলেন। ওপরের দিকেই। বনেদি পরিবারে বড় হয়ে ওঠা একটি সুন্দর, সংবেদনশীল মন যখন তখনই ছুঁয়ে যেত আমায়। আবার কাজে মন দিলাম। আমি লিলিফুলের মতোই এক জায়গায় ফুটে থেকেছি। কেউ আমায় খুঁজে নেয়নি। সাত বছর কেটে গেছে। আমি লিলিফুল হয়েই ফুটে থেকেছি। সাত বছরে একটিও ইন্টারভিউয়ের সুযোগ হয়নি সেই নায়িকার সঙ্গে। প্রতিবারই আমার সামনে দিয়ে ইন্টারভিউ 'হাইজ্যাকড়ড' হয়ে গিয়েছে। চ্যানেল স্টুডিওওওতে নায়িকা এলেও, ইন্টারভিউ নিয়েছে অন্যজন। তবে আশার কথা, নায়িকাও আর আমায় প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেলেননি।

বাজারে জোর গুজব। সেই নায়িকা এক বছরের মধ্যেই বিয়ে করবেন। টুক করে ফোন করি, কনগ্রাচুলেশনস.. কই আমাকে জানালে না!
-তুমি তো জানতেই.. কতদিন পর তোমার গলা শুনতে পেলাম, খুব ভাল লাগল ফুলকলি।
-তুমি এমন বল যেন আমিই নায়িকা, তুমি আমার ফ্যান।
-কিছুটা তো তাই-ই। চুলটা কিন্তু একদম কেটো না
-বাজে কথা রাথো... বিয়ের প্রিপারেশন কেমন চলছে?
-চলছে চলছে.. এখন তো সবকিছুই সাজানো-গোছানো মধু-মধু। নতুন সংসারে গেলে মানিয়ে নিতে পারব কিনা... তোমার কেমন হয়ে গেল বল তো!
-আমার যা-ই ঘটুক। তোমাদের এত দিনের সম্পর্ক। ইউ মাস্ট হ্যাভ নোন হিম ইনসাইড আউট। -মনে তো হচ্ছে সব জানি। তোমারও তো মনে হয়েছিল সব জানো..
-ঘাবড়িও না একদম। তবে বিয়ের পর সিনেমা ছেড়ো না। তোমার ওই ডিসিশনটার সঙ্গে একমত হতে পারিনি।
-জানি না কী করব। সব কিছুরই একটা শেষ আছে, সেটা ভালভাবে করাই ভাল। তোমার ডালিমকুমার কেমন আছে? তাকে ভাল রেখেছ তো?
- হ্যাঁ, হ্যাঁ.. টাচউড।

মাস দুয়েক হল, প্রায়ই ফোন করি নায়িকাকে। বেজেই যায় তোলেন না। এ দিকে চ্যানেলের চাপ। যেভাবেই হোক বিয়ের মরশুম গরম থাকতে থাকতে একটা ইন্টারভিউ। একে নাঃ হল না শেষ অবধি। এ বছর জানুয়ারির শেষ দিকে হঠাত্ একটা ফোন..
-প্লিজ প্লিজ কিছু মনে কোরো না, তোমার একটা ফোনও তুলতে পারিনি। রেগে গেছ?
-ইয়েস!
-প্লিজ বেশি রেগে যেও না। একটু কম রেগো। ফোন অ্যাটেন্ড করতে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অমুক দিন আমার বিয়ে, তোমাকে আসতেই হবে।
-তুমি নিজে ফোন করলে এটাই অনেক।
-স্টপ ইট, তোমার সবসময়ে ফর্ম্যালিটি। দেখা হচ্ছে কিন্তু আমাদের।
বাড়ির অ্যাড্রেসে কুরিয়ারে কার্ডটাও এল। নায়িকার মা পাঠিয়েছেন। সেদিন রাতে কী মনে হল, একটা মেসেজ ছাড়লাম-
"সাংবাদিক হিসেবে ওই তিন পাতা ইন্টারভিউয়ের পর আর কিছুই করতে পারলাম না তোমার জন্য। তা-ও যে তুমি এত দিন আমায় মনে রাখলে এটাই আশ্চর্ষের।"
সঙ্গে সঙ্গে বিপবিপ..
Stop it phulkoli, I judge people by who they are, not what they do. Love you as always. See you at my wedding.

এই শহরের অভিষেক-ঐশ্বর্যা যেদিন বিয়ে করলেন, মিডিয়ার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে, মি়ডিয়াও ছেড়ে কথা কইল না। জাপটাজাপটি মারামারি করে বাইরে থেকেই ছবিটবি তুলল। কলকাতার অভিজাত ক্লাবের ভেতরে কাতারে কাতারে নিমন্ত্রিত অতিথির ভিড়ে সামান্য গুটিকয় সাংবাদিকের তালিকায় অনেককেই দেখতে পেলাম না, যাঁদের 'এরিয়া' টালিগঞ্জ বলে বিখ্যাত। কিংবা যাঁরা স্টুডিয়োতে এই নায়িকারই ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য হাঁকপাঁক করেন।
উপহার দিতে গিয়ে নায়িকার মেহেন্দি হাতের স্পর্শ।
-এলে তাহলে! উফ, আমি তো ভাবলাম রেগেই আছো.. আবার সঙ্গে একটা এতবড় গিফ্ট? কোনও মানে হয়!
লাল বেনারসি ঘোমটা টানা। লাল টিপ। অনেকবার এই সাজে দেখেছি.. এবার শুধু ক্যামেরা নেই। সত্যিকারের বিয়ে।
জীবনের সেরা ইন্টারভিউগুলো ম্যাগাজিনের পাতায় হয় না। স্টুডিয়োর ভেতরেও নয়। লুকনো ক্যামেরাতেও নয়। সাংবাদিকতার এগারো বছর বাদে আবিষ্কার করলাম, সত্যিকারের ইন্টারভিউগুলো হয় বালিশে মাথা রেখে, বাড়ির বারান্দায় কিংবা নেহাতই মনে মনে।

ফুলকলি
Your Comments

গল্পের উপস্থাপনে অনেক আকাঙ্ক্ষা আছে!এটা স্বাভাবিক ভাবেই পেজ ৩ টাইপের উপস্থাপনা নয়। কোথাও কোন পাত্র-পাত্রীর নাম নেই। যদি না নায়িকার বাবার একটা সিনেমার রেফারেন্স দিতে তাহলে আরেকটু বেশি হাবুডুবু খেতাম সে কে তা বুঝার জন্য! মানুষের জীবনে ভাল বন্ধু খুব বেশি দরকার হয় না, আশা করি সেরকম বন্ধু তোমরা। ভাল থেকো নিজের জীবনেও, ভাল বন্ধুদের সাথেই থেকো।

  Post CommentsX  

apnar lekha valo laglo.... r laster line ta asadharon.... jiboner ses interviewgulo kagojer patai hoi na..balise matha rekhe barir barandai....

  Post CommentsX  

apnar lekha valo laglo.... r laster line ta asadharon.... jiboner ses interviewgulo kagojer patai hoi na..balise matha rekhe barir barandai....

  Post CommentsX  

1ta chulkani magi tui

  Post CommentsX  

আপনার লেখার হাত সত্যিই ভালো। এই ব্লগটা পড়ে আবারও সেটা মনে হোলো। শেষ বাক্যটা অনবদ্য - ``সত্যিকারের ইন্টারভিউগুলো হয় বালিশে মাথা রেখে, বাড়ির বারান্দায় কিংবা নেহাতই মনে মনে``। আর, আপনাদের সাংবাদিকতার জগৎটা বড়ো স্বাভাবিক মানের হয়ে গেলো এই লেখাটা পড়ে। সেই office politics - একই রকম সব জায়গায়, তাই না?

  Post CommentsX  

........durdanto........

  Post CommentsX  

awsm...... variation of life ..............

  Post CommentsX  

fulkoli, ithink ``you judge people by who they are, not what they do``. kintu tomar halum kumar??? very good........... thanks

  Post CommentsX  

khobar. hshkgehmkovblkgfnbx mfubgf ft fgjoglihk

  Post CommentsX  

love u...bolechile likhbe. ..eta nie...its a treat. ...love u

  Post CommentsX  

touched....

  Post CommentsX  

halumkumar-er address ta dao... ebar `supari` ta nieai ni...

  Post CommentsX  

khub...khub valo laglo .....

  Post CommentsX  

পড়াটা শেয হতে আমার দুচোখ কেন যে জলে ভিজে যাচ্ছে কে জানে!!!

  Post CommentsX  

started reading the blog only to pass time....but strangely, i could not realize how the time passed as i continued reading line by line...not just a write-up but a open confession by fulkoli :) loved it simply...keep it up.

  Post CommentsX  

tomar lekhar preme porlam...

  Post CommentsX  

it`s really nice and interesting one. i congratulate you, a writer hidden behind a reporter. thanks to gift us such good story. regards

  Post CommentsX  

phulkoli tomar blog amar osadharon lage... lekha ta chaliye jao...

  Post CommentsX  

you are great phulkoli... thik bolechhe nayeeka..... tumi..jekono kotha khub guchhiyee....ebong rosiye bolte paro....amar area te emon ekta incident achhe..jeta exclusive news hote pare....very recent....ami pray 3 bochhor aage kolkata tv sriporna ke sskm er ekta news diyechhilam....15 minuter telecast...

  Post CommentsX  

কোয়েল মল্লিককে নিয়ে লেখা তাই না ফুল কলি

  Post CommentsX  
Post Comments