Fully filmy, ১২১ নট আউট, Phool koli

১২১ নট আউট

লিখতে একটু দেরি হল বটে। কিন্তু বেটার লেট দ্যান নেভার কে না জানে। এবার পুজোয় রানি মুখার্জিবাড়ির পুজো কভারেজে গেছি। অন্যান্য বার সান্তাক্রুজের স্কুলের মাঠে হত। ভিড়ভাড়াক্কায় যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়। তবু রানির বাড়ির লোকজন রাগ চাপা দিয়ে হাসি মুখে টেনে বেশ চোস্ত অভিনয় করে যান। এবার গিয়ে এক ভিন্ন কাণ্ডকারখানা দেখলাম। স্কুলের মাঠের বদলে ফাইভ-স্টার হোটেলের লবি আর ওপেন স্পেস জুড়ে একেবারে এলাহি মেলা। মুম্বইয়ের সবচেয়ে ধনী প্রযোজক গোটা পুজো স্পনসর করেছেন। চারপাশে ফুড-স্টলে চোখ-কপালে-তোলা দাম। নোলা-টসটস করলেও পকেট গরগর করে। নমুনা, একখানি এগ রোলের দাম একশো আশি টাকা... প্যান্ডেলজুড়ে ফুলের সাজ। ফুলের ঝাড়লন্ঠন ইত্যাদি। পুলিশ-পাহারা। সবচেয়ে দ্রষ্টব্য যেটা, এই প্রথমবার ঘটল... কর্পোরেট ইভেন্টের ধাঁচে একটি পিআর এজেন্সিও মোতায়েন করা হয়েছে। মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য।

এবার পুজোয় রানির দেখা মেলেনি। যশ চোপড়ার তিরোধানের পর রানি অন্তরীণ থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বদলে কাজল, যিনি এতদিন এ পুজোয় মুখই দেখাতেন না, এলেও বগলে (হিন্দিতে পড়ুন) একাধিক বডিগার্ড থাকে, এবার তিনি রোজ দু'বেলা এলেন। গিজগিজ করতে থাকা মিডিয়ার সামনে স্টেজে উঠে একমাথা ঘোমটা দিয়ে করজোড়ে অঞ্জলি দিলেন। মিডিয়াকে অনর্থক একখানি ছোট্ট ঘেরাটোপে আটকে রাখা হল। অঞ্জলি দিতে দিতেই মাঝে মাঝে পিছনে তাকিয়ে বোধকরি তিনি মিডিয়ার মাথা গুনেও নিচ্ছিলেন। প্রতি অঞ্জলির পরে স্টেজ থেকে নেমে আবার বডিগার্ডের ঘেরাটোপেই প্রস্থান করতেন। মিডিয়ার বুম ধাওয়া করলে সিকিউরিটিরা হেঁইয়ো-মারে আটকে দিত। পিআর-রা সামনে এসে বলত। কাজল উইল নট গিভ বাইটস ম্যাডাম, আর যার বাইট চান, করিয়ে দিচ্ছি... এইস্... স্...স্... বাইট করিয়ে দিবি মানে? বুম তো বাড়াব আমরা, প্রশ্ন তো আমাদের, বাইট করানো আবার কী? চামচে করে গিলিয়ে দিবি না কী? কাজল উইল গিভ ইউ বাইট আফটার অফারিং হার অঞ্জলি। ওয়েট।

একদা এক-নম্বর এই নায়িকার এমন বাড়াবাড়ি সবারই বেশ চোখে লাগছিল। ওঁর বাজারও পড়তির পথে, কাজেই মুম্বই প্রেস খুব একটা আগ্রহী নয়। তবু সবাই অপেক্ষা করার পর পিআর এসে ঘোষণা করল, কাজল উইল নট গিভ বাইটস। নট ইভন টু দ্য ন্যাশনাল মিডিয়া। সরি... ষষ্ঠী সপ্তমী একই ঘটনার রিপিট টেলিকাস্ট। কিন্তু অষ্টমীর সকালে ব্যাপারটা বেশ শিলাবৃষ্টির মতো ঝটিতি নির্মম হয়ে গেল। পুজো কভারেজে প্রতিদিন শাড়ি পরা নিয়ম। এক এক দিন এক এক রকম সেজেছি। অষ্টমীতে দেখা গেল মিডিয়ার জায়গাটা আরওই ছোট করা হয়েছে ব্যারিকেড দিয়ে। বুমধারী সাংবাদিকদের মধ্যে প্রবল ধাক্কাধাক্কি চলছে। এরই মধ্যে এক সিকিউরিটি গার্ড নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে আমার শাড়িতে টান। আমার শাড়ির প্রায় যায় যায় অবস্থা। একমাথা রাগ নিয়ে চ্যাঁচালাম, কুছ তো ডিসেন্সি রাখো, ইয়ে পূজামণ্ডপ হ্যায় ইয়া নেহি? ম্যাডাম ইতনা ভিড়ভাড়মে আপ শাড়ি পহেনকে কিঁউ আ গয়ে?

প্রবল খচে গিয়ে আমার পাশ থেকে এক সাংবাদিক চেঁচিয়ে উঠলেন, কিঁউ তুমসে পুছনা থা ক্যায়া? মু সামালকে বাত করো... আমিও একহাত নিলাম সেই পিআরকে। আসলে এঁরা এই আনরেস্টটাই চাইছেন, যাতে বোঝানো যায় মিডিয়া কন্ট্রোল করা কতখানি ডিফিকাল্ট আর কাজলের ক্রেজ এখনও রয়েছে... সোজা বলি, পুজোমণ্ডপে এত অসম্মানিত হলে আমি এখানে থাকব না। বাইট তোমাদের করানোর দরকার নেই। এখানে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বাইট আমরা এমনিই নিয়ে নেব, তার জন্য হেল্‌প করতে হবে না। বাগড়া না দিলেই যথেষ্ট।

নাকটা আরও উঁচু করে পি আর জবাব দিল, কাজল এবার অষ্টমীভোগ সার্ভ করবেন। তোমরা বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়াও এখন শুধু ক্যামেরাম্যান অ্যালাউড খাওয়ার জায়গায়। তোমরা নও।

বলে কী? একে শাড়ি পরা নিয়ে মন্তব্য। তার পরে এই কথা। সহ্য হল না। ম্যাডাম, আপনাদের কাজল আপনারা চোখে-চোখে রাখুন। আমি কলকাতা থেকে এসেছি ঠিকই, তবে কুত্তাদের সঙ্গে বাইরে লাইন দিতে পারব না। মুম্বইয়ে আরও অনেক পুজোয় যেখানে সসম্মানে দুর্গাপুজো করা হয়, সেখানেই কভার করতে চললাম।

অ্যাজ ইউ উইশ ম্যাডাম, উই উইল নট ফোর্স ইউ টু কভার দিস পূজা... আমার ক্যামেরাম্যানকে একটা ইশারা দিয়ে গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে এলাম মণ্ডপ থেকে...

এই ব্লগের হেডিংটা ক্রিকেটীয় ভাষায় স্কোরকার্ড। সাংবাদিকতার ভাষায় অন্য কিছু। দশ বছর আগেও জার্নালিজমে শব্দগুলো কয়েন করা হয়নি। এখন তো মুখে মুখে। ওয়ান-টু ওয়ান। নাক উঁচুরা কেউ বলে ওয়ান-অন-ওয়ান। তাতে অবিশ্যি তেমন কোনও হেরফের হয় না। যাহা বাহান্ন, তাহাই তিপান্ন। দশ বছর আগেও সাংবাদিকতায় এত ফড়ে আর দালালদের উত্পাত ছিল না। পিআর শব্দটা খায়-না-মাথায়-দেয় জানত না কেউ। প্রেস কনফারেন্সে এরা শুধু ক্লিপবোর্ড নিয়ে এগিয়ে আসত উপস্থিত সাংবাদিকদের সই নিতে। এখন তাদেরই বাজার গরম। ওরাই এসব ওয়ান-টু-কা-ফোরের চক্কর চালু করেছে। আমাদের আর বিখ্যাতদের মাঝখানে নাক উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়ে ঢিমে তেতালা বাজায়। ওয়ান-টু-ওয়ান করিয়ে দিচ্ছি। ওয়েট কর। আমাদেরও কপাল এমনই, আজকাল বহু জার্নালিস্টকে দেখি এঁদেরই কড়ে আঙুলের ইঙ্গিতে চলেন বলেন।

মুম্বই আমার এলাকা নয়। অন্য শহরে কভারেজে এসে এমন তীব্র একটা ডিসিশন নিয়ে ফেলব, আগে থেকে ভাবিনি। কিন্তু পরের ঘটনাটা একেবারে অপ্রত্যাশিত। প্যান্ডেলে গেটের মুখে এসে শুনি পেছন থেকে সেই পিআর চিত্কার করে আমার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে আসছে। দাঁড়িয়ে পেছন ফিরি। দেখি এনডিটিভি, সিএনএন, টিভি১৮, সিএনবিসি ইত্যাদি প্রভৃতি জাতীয় চ্যানেলের বুমধারী সাংবাদিকেরা প্রায় মার্চপাস্ট করতে করতে সৈনিকের মতো বেরিয়ে আসছে! পরের পনেরো মিনিট নাটকের মতো। পিআর এসে বলল, কী করলে তুমি প্যান্ডেল ছেড়ে যাবে না বলো, শুড আই টাচ ইয়োর ফিট?

ঘাবড়ে গিয়ে বলি, মানে?

নাইন-এক্সের প্রতিনিধি এগিয়ে এসে বলেন, যে মণ্ডপে একজন মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে এত বিশ্রী ব্যবহার হয়, সেই পুজো আমরা কভার করব না। হইহই করে ওঠে অন্যরা, ম্যাডাম আপনি ঠিক করেছেন। কেউ কিছু বলে না বলে এরা বেশি বেড়ে গেছে।

আমরা বাইট নিয়ে বেরিয়ে যাব। কাজল ইজ নট আওয়ার প্রায়োরিটি। টাইমের মধ্যে যদি উনি কথা বলতে না পারেন আমাদের দরকার নেই। অফিস গিয়ে কপি লিখতে হবে... প্লিজ শুনুন আমার কথা। ইউ নো হাউ মুডি দিজ সেলেব্রিটিজ আর।। ওরা নিজেদের মর্জিমাফিক চলে। আমাদের ওদের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছু করার থাকে না। আমাদেরও কিচ্ছু করার নেই। আপনারা প্লিজ চলে যাবেন না, মিডিয়া চলে গেলে আমাকে কোম্পানি শোকজ করবে। ম্যাডাম, আপনার পায়ে পড়ছি, যাবেন না। আরে? সবকিছু আপনার কথামতো করতে হবে নাকি? গাড়ি-ক্যামেরা নিয়ে এতক্ষণ বাইরে থাকলে কোম্পানি এমনিতেই আমাকে শোকজ করবে। আমাদের যা নেওয়ার নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমরা যাচ্ছি। আপনারা প্লিজ কাজলের বাইট নিয়ে যান। আরে বলছি তো আমাদের দরকার নেই। এক্ষুণি তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন, এখন আবার আদর করে ডাকছেন।। আমরা কি কুত্তা নাকি? প্লিজ, আসুন, আপনারা না এলে কাজল ভোগ সার্ভ করবেন না। মানে কী? আমাদের ওই ছবি দরকার নেই বলছি তো! প্লিজ এরকম করবেন না, কাজলের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান করিয়ে দেব। এক কাজ করুন। ওঁর ওয়ান-টু-ওয়ানের মুড এলে আপনিই নিয়ে নেবেন। এখুনি বললেন ওঁর মুড নেই। আবার পাল্টি খাচ্ছেন। না না, মানে, আমি ট্রাই করব ওয়ান-টু-ওয়ান।। আসুন, কাজল ওয়েট করছেন। ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর কিচ্ছু ট্রাই করতে হবে না। এই ভাইসব, চলো চলো।। ম্যাডাম আপনি গাড়িতে উঠে যান। আমরা বয়কট করছি। কালকের ব্যাপার কাল দেখা যাবে।

সেদিনের উলট-পুরাণ সিনেমার মতো মনে আছে। আল্টিমেটলি সেই নায়িকা সেদিন অপেক্ষা করে ভোগ সার্ভ না করেই বাড়ি ফিরেছিলেন, তাঁকে ঘিরে মিডিয়া ছিল না বলে। আজ অবধি নিজের শহরে এত ইউনিটি দেখিনি। এখনও এখানে প্রেস কনফারেন্সে তারকাকে ঘিরে হুড়োহুড়ি আর এক্সক্লুসিভের জন্য এক কোণে পিআরের সঙ্গে পেয়ারের গুজগুজ ফিসফাস করা দেখলে সত্যিই আরও বেশি করে মনে পড়ে ঘটনাটা। বাইট-এর জন্য অবাস্তব খেয়োখেয়ি, প্রায় সারার্থহীন ইন্টারভিউয়ের জন্য এমন উল্লাস... এই আনতাবড়ি সাংবাদিকোচিত উন্মাদনাকে ক্যাচ করেই মিডলম্যানেরা দলে ভারী হয়ে গেল। তারকা আর সাংবাদিকের মাঝখানে সেতু হওয়ার বদলে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, আমাদেরই ভুলে। আমরাই ভুলে গেলাম দশে মিলে সাংবাদিক সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। বিশ্বাস করুন, ফড়েদের ফুটে যাওয়ার সময় আসন্ন। আমরা একত্র হলে আমাদেরই নাম বাঁচবে। কেউ পাপারাত্জির মতো ব্যবহার করে ছু়ডে ফেলতে পারবে না। বডিগার্ডের চাকরি যাবে। স্পনসরদের খরচা বাঁচবে। বিনোদন সাংবাদিকতা ওয়ান-টু-ওয়ান নট আউট থেকে ষাবে। ১২১ নট আউট! লম্বা ইনিংস খেলার প্রত্যাশায়।

ফুলকলি
Your Comments

media-e manush k celebrity banay. aapnader kachhe sonirbandhho anurodh aei rajnoitik byaktitwo dekhlei jhapie porata bandho kore din, erao bujhben kato dhaan a kato chal......vabun toh emon ekta din jedin kono ek manonio/manonia kendrio montri hotath kore tar sada scropio thheke dharmotolay delhi case er protibaad a mombaati jwalate neme porlen media uposthhit dekhe,athocho taake keo cover korlen naa. limelight a asar aei byarthho prochesta kirokom mojadar hote paare...

  Post CommentsX  
Post Comments