জাগো দলপ্রহরণধারিনী...
Last Updated: October 31, 2012 15:50
গত কয়েকদিন প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। রাতে স্বপ্ন দেখলুম জানেন। মানে দুঃস্বপ্ন। গান তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আঁকশি নিয়ে এগিয়ে আসছে। অক্টোপাসের আট-দাঁড়া নিয়ে মাথার চুল খামচে ধরছে। কানে গমগম করে বাজছে জেগে ওঠার গান। যেদিকে তাকাই সোনার আলোর মত। যে দিকে ছুটি সেদিকেই জেগে ওঠার গান। জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিনী... ভোর রাতে 'জাগো'র গান, খটখটে রোদ্দুরে 'জাগো'র গান, পড়ন্ত বিকেলে 'জাগো'র গান, বেজেই চলেছে মহালয়া। মহালয়া নয়, একেবারে মহাপ্রলয়া। স্বপ্নের মধ্যেই কাছা তুলে দৌড় লাগালাম। পিচকালো রাস্তার এক মোড় পেরিয়ে নতুন মোড়। হাঁফাচ্ছি। দম নেওয়ার চেষ্টা করছি। ব্যাস আবার শুরু হল। জাগো তুমি জাগো, জাগো দশপ্রহরণধারিনী...
সদ্য বিসর্জনের ঢাক বাজিয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে পৌঁছেছেন পার্বতী। লম্বা জার্নির ধকল। কোথায় একটু ঘুমোবেন। তা নয় সেখানেও সাউন্ড পলিউশন। তার থেকেও বড় সমস্যা বীরেন্দ্রর গলা শুনলেই ঘুম ভেঙে যায় মায়ের। মায়ের মোবাইলের মর্নিং অ্যালামেও তাই স্নেহের বীরুর গলা। অগত্যা গোটা পাঁচেক অ্যালজোলাম।
কৈলাসে কেলেঙ্কারি চলছে। আমিও দৌড়চ্ছি। পেছনে তেড়ে আসছে 'জাগো'র গান। ঘরবাড়ি সরে যাচ্ছে। বাতাসের মত ভাসছি। চেষ্টা করছি ঘুমভাঙানিয়াকে পেরিয়ে একটু ঘুমোনোর। কবি কী মমতায় লিখেছিলেন 'ওগো ঘুমভাঙানিয়া তোমায় গান শোনাব'। তা যে এত ভয়ঙ্কর তা ভাবতেও পারিনি। ফের কর্ণপটহে সুড়সুড়ি দিচ্ছে অভয়াশক্তি। আর আমি চাদরের তলায় ক্রমশ ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি। কুঁকড়ে যাচ্ছি শুধু এই সময়ের কথা ভেবে। শীতের রাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চিত্কার করতে ভয় পাচ্ছি। গান শুনতে ভাল লাগছে না। বলতে ভয় পাচ্ছি। ভয় পাচ্ছি , ভয় করছে বলতেও। কান্না পাচ্ছে, চেপে রেখেছি। রাগ হচ্ছে, ব্রহ্মতালু ঠান্ডা রাখতে ইষ্টনাম জপ করছি। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়ছে। আপ্রাণ চেষ্টা করছি লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে কপাল সোজা রাখার। স্বাভাবিক থাকতে হবে। হাসতে হবে। হাততালি দিতে হবে। তালে তালে নাচতে হবে। এর বাইরে যদি কেউ কিছু বেফাঁস বলেছ কী সোজা শ্রীঘর। কিম্বা পেয়াদা দিয়ে আড়ং ধোলাই।
কী বলছেন? বানিয়ে বলছি।
শিলাদিত্য, অম্বিকেশরা বাজারে হিট করল তো প্রতিবাদেই। চাষি কেন বলে সারের দামের কথা। অধ্যাপক কেন কার্টুন আঁকবে ইন্টারনেটে। গর্হিত অপরাধ। তাই জেলে পুরে দাও। ওরে বাব্বা। এসব দেখে বেশ শিক্ষা হয়েছে আমার। মাথা খারাপ নাকি। এরপরে আবার প্রতিবাদ। পাগল না... ওসব যা হওয়ার সব স্বাধীনতার যুগে হয়ে গেছে। বিপ্লব, বিদ্রোহ, প্রতিবাদ ওসব নেতারা বলে।
আর বলে...
যাক বাবা ওসব কথা। আমার কী দরকার ও নিয়ে। গান শুনতে ভাল লাগছে না। স্বয়ং মা দুর্গা যদি অ্যালজোলাম নিতে পারেন তবে আমি তো কোন ছার। তাই গান শুনুন। পারলে মুখোশ ব্যবহার করুন। এক্সপ্রেশন ধরা পড়বে না। কী করবেন। পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে তো। কোন মহর্ষী তো বলেইছেন 'চেঞ্জ ইস দ্য ওনলি আনচেঞ্জিং থিং ইন দ্য ওয়ার্ল্ড'। বিশ্ব পৃথিবীর সেই নিয়ম ভাঙবেন কী করে। সংস্কৃতেও ছোটবেলায় পড়েছি-- 'চক্রবত পরিবর্তন্তে সুখানি চ, দুখানি চ'। একটু অপেক্ষা করুন। বাংলায় ভাবসম্প্রসারণ করেননি 'ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড'। অপেক্ষা করুন। সময়ের নিয়মেই সুখ আসবে।
এবার আপনাদের একটা টোটকা দিই।
একটু পাল্টে দিনতো গানখানা। পেয়ে যাবেন বড় পুরস্কার।
বলুন
জাগো তুমি জাগো, জাগো দলপ্রহরণধারিনী...
অভয়াশক্তি, বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো...
প্রনমী বরদা, অজরা অতুলা জাগো মা।
কী বললাম বুঝেছেন?
ম্যাডাম স্কোয়ারে আর্জি
------------------------
ক্ষমা করবেন ভদ্রমহোদয়গণ। নির্ভেজাল স্বপ্নের কথা লিখেছি। জেলে পুরবেন না। আমি ভিতু মানুষ। বউ বাচ্চা নিয়ে ছাপোষা সংসার। টেনশনে পেট গরম হয়।
কুশল মিশ্র