sachin, সচিন , cricket

বিদায় মাস্টার ব্লাস্টার, বিদায় এবার...

চব্বিশ বছর। দু`যুগ কাটিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে চলেছেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। একদিনের ক্রিকেট থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিদায় জানিয়েছেন টি-২০কেও। এবার ক্রিকেটের সঙ্গে নিজের শেষ গাঁটছাড়াটাও ছিন্ন করার পথে এগিয়ে গেলেন মাস্টার ব্লাস্টার। আর ওই যে আমরা যারা এতদিন ক্রিকেট বলতে সচিন বুঝতাম তারা হঠাৎ একটু থমকে গেলাম। মানুষ জন্মের দায় কাঁধে নিয়ে ছোট থেকেই একটা জিনিস শিখে আসছি, জীবন আসলে কারোর জন্যেই থেমে থাকে না। তাই সেই হঠাৎ থেমে থাকাও আবার নিজের নিয়মেই জঙ্গম হল। এই পোড়া দেশে তো ক্রিকেট ছাড়া আর কোনও খেলা তেমন পাত্তা পায় না, আর জন্ম কুঁড়ে আমরাও অন্যকিছু নিয়ে বিশেষ ভাবনাচিন্তা করি না। আমরা যারা ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি জন্মেছি টেস্ট ক্রিকেটের পাঁচদিনের ঠুকঠুকানিতে তাদের ঘোর আলসেমি। অন্যদিকে টি-২০-এর ক্ষুদ্রতায় বিসম আপত্তি। আমাদের কাছে ক্রিকেটের আসলি মজা ওই ৫০টি ওভারের ম্যাচে। কিন্তু সচিন তেন্ডুলকর নামের ছোটখাট চেহাড়ার ওই লোকটার টানেই কুঁড়েমির ঘেরাটোপ কাটিয়ে পাঁচ দিনের লম্বা ক্রিকেটেও মন ভাসিয়েছি। ব্যাট বলের খেলাটা বোধগম্য হওয়ার শুরু থেকেই আমাদের কাছে ক্রিকেট দুনিয়াটা সচিনময়। চব্বিশটা বছর দিব্যি ছিলাম এক পৃথিবী সচিন নিয়ে। ঘোরের মধ্যে। আমার চাওয়া-পাওয়া, ভাললাগা, মন্দলাগা, মান-অভিমান কোথায় গিয়ে যেন জায়গা করে নিত সেই পৃথিবীর আনাচে কানাচে। কিন্তু যেই তিনি ওই আমাদের সাধের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, অমনি যেন ঘোর ভাঙল আমার। বেশ গালে হাত দিয়ে নিজের মনেই জাবর কাটতে শুরু করলাম। ওই যে সচিন ৮৯-এ ব্যাট হাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন... তারপরে এখানে ওখানে তাঁর ঝক্কাস ইনিংসের ইতিউতি কথা ভাবতে ভাবতে আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের অতি ক্ষুদ্র কোষগুলো হঠাৎ করে মনে করিয়ে দিল, আরে.. ২৪টা বছরে বাইরের পৃথিবীতে অনেক কিছুই বদলে গেছে না! বার্লিনের দেওয়ালটা ভেঙে দুই জার্মানি যে বছর এক হল সেই বছরই তো একদিনের ক্রিকেট সচিনের অভিষেক দেখল। ভুলেই তো গেছিলাম এই ২৪ বছরে আমাদের দেশ ৮ জন প্রধানমন্ত্রীকে দেখে ফেলেছে। জিরো ফিগারের গ্লোবাল দাবি মেনে টেলিভিশনের চেহারাটা স্লিম থেকে স্লিমতর হয়েছে। অ্যান্টেনা নামক যন্তরটার গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটেছে। ২৪ বছরে টিভি মিডিয়ার সংখ্যা ৩ থেকে ৩০০ হয়েছে, ৩০০ থেকে ৩০০০ হচ্ছে। সনাতনী কিরিং কিরিং টেলিফোন থেকে মুঠো ফোনের দৌলতে বাকপটুতা বেড়েছে আম আদমির। সলমন দিব্যি প্যাংলা থেকে মাসলম্যান হয়ে টাইগার সেজেছেন। অন্তর্জালের জাদু বিশ্বের ছোঁয়ায় সত্যিই পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। কতই না বদল এসেছে চেনা চারপাশটাতে। কিন্তু ওই যে সেই পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির মানুষটা কখনও শারজায় মরু ঝড় হয়ে কখনও সেঞ্চুরিয়নে, সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া নিধনে অথবা হায়দরাবাদে একের পর এক স্মরণীয় ইনিংস উপহার দিয়েছেন, তার বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি। সচিন নামের বিস্ময় প্রতিভা হিরো কাপে যে বছর দেশকে জয় এনে দিচ্ছেন, তার আগের বছর ১৯৯২ অযোধ্যা দাঙ্গার কলঙ্কে জীর্ণ হয়েছে ভারত। এরপর গুজরাট দাঙ্গা থেকে ২৬/১১, হাওয়ালা থেকে কোল কেলেঙ্কারি, দিনের পর দিন বেড়ে চলা নারী নির্যাতন, অনার কিলিংয়ের লজ্জায় কুঁকড়ে থাকা আমদের কৈশর থেকে তারুণ্যে উত্তরণ কোথায় গিয়ে যেন সচিনের ব্যাটে মুক্তি খুঁজে পেয়েছে। প্রকৃতির সুনামির তাণ্ডব ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি সচিনের ব্যাটিং ঝড়ের আশ্রয়ে। দেশের সীমারেখাটা পেরিয়ে বিদেশেও তো একগুচ্ছ ওদল বদল ঘটেছে। তালিবানদের উত্থানপতন, বার্মিয়নে বুদ্ধমূর্তির ধুলো হয়ে যাওয়া, সাদ্দাম হোসেন, আরাফতের নির্মম পতন, ৯/১১, লাদেন নামের ফ্রাঙ্কেস্টাইনের জন্ম-মৃত্যু, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা, আমেরিকার সাদা বাড়ির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট, চারটে অলিম্পিকস, চারটে ফুটবল বিশ্বকাপ, মিশর রেভলিউশন... আরও কত্ত কত্ত কিছু। দু`টো আস্ত যুগে যা যা পরিবর্তন হয়, কালের নিয়মে বদলেছে সবটুকুই। কিন্তু এই সবকিছুর মাঝেই যা কন্সট্যান্ট, সেটা সচিন তেন্ডুলকারের রানের খিদে। ১৯৮৯ সচিনের যখন প্রথম অভিষেক হল মেসির বয়স ২, জকোভিচের ২, ফেল্পসের ৪, উসেইন বোল্টের ৩। এঁরা প্রত্যেকে বড় হয়েছেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে মহাতারকা হয়েছেন। আর এঁদের কুঁড়ি থেকে মহাতারকা হয়ে ওঠার পথটাতে একজনই ক্রিকেট জগতের অধীশ্বর থেকেছেন। সেই কবেকার ব্রায়ান লারা থেকে গ্রেম হিক, সঈদ আনোয়ার থেকে ইনজামাম উল হক, রিকি পন্টিং থেকে হালের অ্যালেস্টার কুক, মুখ বদলেছে সচিনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের। কেউ কেউ জোরদার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তাঁর সিংহাসনের দিকে। হয়ত সময় বিশেষে টাল খেয়েছে সেই সিংহাসন। কিন্তু তাঁকে সিংহসনচ্যুত করতে পারেনি কেউই। সচিন তেন্ডুলকার কী মানের ক্রিকেটার তার বিচার করা বাতুলতার নামান্তর। ক্রিকেটে যিনি নিজেই নিজের অসীম সীমা তৈরি করেছেন তাঁকে আসলে শুকনো পরিসংখ্যানের হিসাবে বাধা যায়ে না। সচিন আসলে আমাদের কাছে একটা গোটা জগত। তাঁর জীবন একটা শিক্ষা। সমসাময়িক সব খেলার সব সেরারা যখন কোনও না কোনও ভাবে বিতর্কের সঙ্গী হয়েছেন তখন এই লোকটার কয়েকশো মাইলের কাছাকাছি বিতর্ক শব্দটা বাসা বাঁধতে পারেনি। ২০১২তে যখন সচিন একশোয় একশো পূরণ করলেন তখন মঙ্গলে কিউরিওসিটি হেঁটে বেড়াচ্ছে। সন্ধান মিলছে ঈশ্বরকণার। ২০১২-এর শেষে সচিন যখন একদিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তার কিছুদিন পর দিল্লির ধর্ষণ নিয়ে প্রতিবাদে উত্তাল হল গোটা দেশ। সে প্রতিবাদে সামিল হওয়া সিংহ ভাগের বড় হয়ে ওঠা কিন্তু সচিনকে সামনে দেখেই। এই ঘটনায় সচিনের নিশব্দ থাকার বিতর্কটা বরং তাকে তোলা থাক। কিন্তু সচিন নামের মানুষটা এই প্রজন্মের প্রতি পদক্ষেপে এতটাই জড়িয়ে আছেন তাতে তাঁর অদম্য লড়াই থেকেই কোথাও না কোথাও যেন প্রতিবাদের ভাষাটাও শিখে ফেলেছি নিজের অজান্তেই। মায়ান ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী ২০১২-এর ডিসেম্বরের ২১ তারিখই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল পৃথিবীর। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে পৃথিবী দিব্যি বেঁচে বর্তে গেল। যখন প্রাণ খুলে বেঁচে থাকাটা সেলিব্রেট করছি, ব্যঙ্গ করছি কুসংস্কারের সাতপাঁচকে তখনই খবর পেলাম একদিনের ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সচিন। তবুও জানতাম টেস্ট ক্রিকেটে এখনও ব্যাট হাতে সচিন মহিমার স্ফূরণ দেখার ভাগ্য আমাদের একই ভাবে অক্ষয় আছে। আজ যেন সেই সৌভাগ্যই একরাশ মনখারাপে মুখ লোকাল। চোখের কোণে জমা হল নাছোড়বান্দা কিছু জলের কুঁচি। ক্রিকেট থাকবে কিন্তু ব্যাট হাতে বোলারদের শাসন করার জন্য ২২ গজে আর থাকবেন না সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। না, দুঃখিত হইনি। চেয়েছিলাম অবসর নিন সচিন। কিন্তু এক অবসরেই আমার সচিনময় ক্রিকেট জগতের ঘূর্ণনটা যে এভাবে থমকে যাবে মালুম পাইনি। আর হয়ত নতুন গতি পাবে না আমার এক পৃথিবী সচিন। কিন্তু সেই থেমে থাকা জগতটাও ভীষণভাবে বেঁচে থাকবে আমার মধ্যে। আজীবন।
Your Comments

it was nice. this help me to do project work on topic sachin tendulkar

  Post CommentsX  

it was nice. this help me to do project work on topic sachin tendulkar

  Post CommentsX  

আপনি ভালো লেখেন , শচীন বা ক্রিকেট বা কোন খেলা নিয়ে এমন শৈল্পিক লেখা কম নজরে পড়ে । আরও ভালো লিখুন।

  Post CommentsX  

সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।

  Post CommentsX  

schiner captaincy theke world cup pele khusi hotam.

  Post CommentsX  

well im still not sure that sachin will finally retire after his 200th test or not..it is highly probable that after 200th test he will set a new goal of playing 250th one..afterall he is ``still enjoying cricket`` and arjun is not yet inducted in the blue..and it is known that sachin doesnt care for his form,and what people say...so,im still worried.

  Post CommentsX  

tui toh cricket er kotha likhte giye aakash paatal ekakar kore dili. sambadikder ei ekta beram , mone hoy orai ekhon desher criminal jogotyer advocate ? sachiner aatma ki toke tara kore ghure berachchhe ! na ki sachin ke baad diye achin ke mante parchhisna. ek nayok tontrer je abosan hoyechhe etai dhanyabad, khelar maath ta sachin/tor baaper sampotti noy je toder ichchhe moton kholoyar rai guru dayitto aajibon boye berabe. protikriya deoyar thakele/ roybablu4@gmail.com

  Post CommentsX  

tui toh cricket er kotha likhte giye aakash paatal ekakar kore dili. sambadikder ei ekta beram , mone hoy orai ekhon desher criminal jogotyer advocate ? sachiner aatma ki toke tara kore ghure berachchhe ! na ki sachin ke baad diye achin ke mante parchhisna. ek nayok tontrer je abosan hoyechhe etai dhanyabad, khelar maath ta sachin/tor baaper sampotti noy je toder ichchhe moton kholoyar rai guru dayitto aajibon boye berabe. protikriya deoyar thakele/ roybablu4@gmail.com

  Post CommentsX  

ok ok ok 1998-2013 zee media corporation ltd (an essel group company), all rights reserved. contact | privacy | legal disclaimer | register | job with us | complaint | investor info

  Post CommentsX  

sachin tendulkar will retire soon from his prolonged cricket carrier. but he has left his cricket gene into his son arjun. let`s pray for arjun to begin an another sachin era.

  Post CommentsX  
Post Comments