আর্থিক সঙ্কটের কথা মেনে নিলেন মনমোহন, প্রণব

আর্থিক সঙ্কটের কথা মেনে নিলেন মনমোহন, প্রণব

আর্থিক সঙ্কটের কথা মেনে নিলেন মনমোহন, প্রণবপ্রত্যাশিতভাবেই সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের আসন্ন বিধানসভা ভোট এবং বিরোধীপক্ষ ও নাগরিক সমাজের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মোকাবিলার পাশাপাশি অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠল দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সঙ্কট। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নিজেও পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির টাকার অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন বৈঠকে।

সোমবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ আগেই কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে আগামী ৬ জুন আর্থিক উপদেষ্টামণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বৈঠকে ডেকেছেন তিনি। অর্থনীতির বেহাল দশা মেরামতে কেন্দ্র শিগগিরই বেশ কয়েকটি আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক সঙ্কট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময় দেশ ও দেশের অর্থনীতির পক্ষে কঠিন। এই সময়ে সরকারের সদিচ্ছা ও দৃঢ়তার পরীক্ষা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় অর্থনীতির বেহাল দশার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির দায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের নয়।

যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন এই পরিস্থিতি একদিনে হয়নি। কিন্তু, গত আর্থিক বছরে যতবারই অর্থনীতির বেহাল দশার প্রসঙ্গ উঠেছে, তা অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর মধ্যেই ভিতরে ভিতরে ক্ষয়েছে দেশের অর্থনীতি। গত বৃহস্পতিবার শেষ আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, জিডিপি নেমে গিয়েছে ৫.৩ শতাংশে, যা গত ৯ বছরে সর্বনিম্ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০০৮-এ বিশ্বজোড়া মন্দার সময়েও জিডিপি এত নীচে নামেনি।

জিডিপির এতটা নীচে নামার কারণ কী? আর্থিক সঙ্কটের কথা মেনে নিলেন মনমোহন, প্রণব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কয়েকটি সূচকের ওপর কোনও দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য নির্ভর করে, ভারতের ক্ষেত্রে তার সবকটিই নেতিবাচক। আর্থিক ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৫.৮ শতাংশ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি ও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট। আর্থিক সংস্কার না হওয়ায় আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মুদ্রাস্ফীতিও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। টাকার ক্রম-অবমূল্যায়নের প্রভাব পড়ছে পেট্রোল আমদানিতে। পশ্চিমী বিশ্বে আর্থিক মন্দার প্রভাব পড়ছে শিল্পপণ্য রফতানিতে। হাচ-ভোটাফোন কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে মামলায় হারের পর কর ফাঁকি এড়াতে বাজেট প্রস্তাবে  অ্যান্টি অ্যাভয়ডেন্স রুল প্রণয়নের ঘোষণা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে দুর্নীতি ও শরিকি রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় নেওয়া যায়নি সংস্কারের সিদ্ধান্ত।

সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে পরিস্থিতি এখনও ১৯৯১ সালের মতো ভয়াবহ হয়নি। যদিও অর্থনীতিবিদদের একাংশের অবশ্য দাবি, ১৯৯১ সালেও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট এত বাড়েনি। তবে তাঁদের ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকার এবার সমস্যাটির মুখোমুখি হতে চায়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরেই বলিষ্ঠ কয়েকটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত সামনে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।



First Published: Monday, June 4, 2012, 20:39


comments powered by Disqus