Last Updated: April 14, 2013 22:30

জেলখানা থেকে মাকে লেখা চিঠিতে ছেলেটা জানিয়েছিল, ১৮ তারিখ বাড়ি আসবে। কিন্তু রবিবারই ছেলেটাকে প্যারোলে আসতে হল বাড়িতে, মায়ের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে। বুধবার রাতে শিলিগুড়িতে আরও পঞ্চাশ জনের সঙ্গে পুলিস গ্রেফতার করেছিল ডিওয়াইএফআই নেতা অমিত দে-কে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন মা বাণী দে। পরিবারের লোকেদের কথায়, ছেলের জন্য উদ্বেগেই মৃত্যু হল বাণীদেবীর।
স্বামী ধ্রুব দে মারা গেছেন তেইশ বছর আগে। একমাত্র সন্তান অমিতের বয়স তখন দেড় বছর। ছেলেকে নিয়েই শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ায় থাকতেন বাণী দে।
জেলখানা থেকে পাঠানো ছেলের চিঠিটা মায়ের হাতে এসেছিল শুক্রবার। ছেলে লিখেছিল,
মা, আমি এখানে ভাল আছি। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক বন্দী তাই আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে।...আমাকে নিয়ে লজ্জিত হবা না। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবা মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে জেলে গেছে। আর এ কাজটা আমার করতে ভালো লাগে, তুমি আগাগোড়াই জানো।...আমার জন্য তোমার গর্ব হওয়া উচিত।...মনে রাখবা আমরা রাজনৈতিক বন্দী, অপরাধী না।...ওষুধ খাও ঠিক করে আর শরীর ঠিক রেখ। শরীর খারাপ হলে এখানে আমার চিন্তা বাড়বে আর অসহায় লাগবে। আই লাভ ইউ, মা। ইতি টুকাই।
কিন্তু সেই চিঠিও মায়ের মনে স্বস্তির স্পর্শ লাগাতে পারল না।
গত বুধবার, ১০ এপ্রিল শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে সিপিআইএমের জেলা দফতরে হামলা হয়। মন্ত্রী গৌতম দেবের নেতৃত্বে মিছিল থেকে হামলা হয় বলেই অভিযোগ সিপিআইএমের। মিছিলে হামলার অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূলও। পুলিস তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার সহ বেশ কয়েকজন সিপিআইএম নেতা-কর্মীকে থানায় নিয়ে যায়। অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকারদের ছেড়ে দেওয়া হলেও গ্রেফতার করা হয় একান্ন জনকে। তাঁদেরই একজন অমিত দে, শিলিগুড়ি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ডিওয়াইএফআই কর্মী। অমিত গ্রেফতার হওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বাণী দে।
অমিত-সহ ৪৫ জনের জামিনের আবেদন খারিজ হতেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন অমিতের মা বাণী দে। শুক্রবার সন্ধেয় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয় শিলিগুড়ি মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
First Published: Sunday, April 14, 2013, 22:30