বয়সের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে অক্ষত মাধুরী ম্যাজিক

বয়সের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে অক্ষত মাধুরী ম্যাজিক

বয়সের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে অক্ষত মাধুরী ম্যাজিকশর্মিলা মাইতি

ছবির নাম- দেড় ইশকিয়া

রেটিং- ***১/২

ভারতীয় ছবির জগতে শেষ ডান্সিং অ্যাকট্রেস ছিলেন কে? শেষ নৃত্যপটীয়সী অভিনেত্রী? আজকের যুগে যাকে অনায়াসেই “ভ্যানিশিং ব্রিড” বলে আখ্যা দেওয়া যায়? দেড় ইশকিয়ায় মাধুরী ম্যাজিক দেখতে দেখতে নস্ট্যালজিয়ার সমুদ্রে ডুবসাঁতার দিতে ইচ্ছে করে। শেষ কবে এমন মনোমুগ্ধকর ডান্সিং পারফরম্যান্স দেখেছি, অনুসন্ধান করতে থাকি। মাধুরী এ ছবিতে বেগম পারা। চরিত্রের নাম যা-ই হোক, দেখতে ইচ্ছে করে মনের মাধুরী মিশিয়ে। সেই হাসি, সেই চোখের ইশারা। ইশকিয়া আতর ছড়াতে থাকে দর্শকের মনে.. সেই এক-দো-তিন উচ্ছলতার দিন নেই ঠিকই, নেই ধক-ধক আমন্ত্রণ। যা আছে, বয়সের বলিরেখার ফাঁকে ফাঁকেই হিরের দ্যুতি। স্বর্ণযুগের স্মৃতি। সোনার ঝিলিক।
বয়সের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে অক্ষত মাধুরী ম্যাজিক
মাধুরী-সম্মোহন পেরিয়ে যেদিকে চোখ পড়ে, তা ছবির চিত্রনাট্যের অপূর্ব গাঁথুনি। দারাব ফারুকির কাহিনি টানটান রোমাঞ্চে ভরপুর। প্রণয় ও বিশ্বাসঘাতকতার ইঁটের ওপর ইঁট বসিয়ে চমত্কার শক্তপোক্ত কাঠামো। বছরকয়েক আগে অভিষেক চৌবে বানিয়েছিলেন ইশকিয়া। বিদ্যা বালানের অভিনয় আর কাহিনির বলিষ্ঠতা, অন্য এক অনুভূতির জগতে নিয়ে গিয়েছিল দর্শককে। সিকোয়েলে তুলনাটা আসবেই। এ ছবিতে মাধুরীর অভিনয় আর নৃত্যের জাদু লিখে দিল অন্য এক ইতিহাস। নাসিরউদ্দিন শাহ- আরশাদ ওয়ার্সি জুটি একই রকম আকর্ষণীয়। তাঁদের অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রিও অটুট। বলিউডে এতটা পরিণত জুটি এই মুহূর্তে পাওয়া যাবে না একটিও। বিশেষ করে মাধুরীর সঙ্গে ছদ্মবেশধারী নাসিরউদ্দিনের কথোপকথনের দৃশ্যগুলোর গভীরতা সত্যিই মনে রাখার মতো।

গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর-এর আবিষ্কার হুমা কুরেশি এখানেও নজর কাড়বেন। চরিত্রটির জন্য হুমা ফার্স্ট চয়েস ছিলেন না। কঙ্গনা রনাওয়ত এই চরিত্রের জন্য ডেট দিতে না পারায় বরাতজোরে হুমার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। আরশাদের সঙ্গে তাঁকে মানিয়েছে ভাল। কিন্তু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো আরও সাচ্ছন্দ্য দাবি করে। গা কাঁটা দেবে বিজয় রাজের অভিনয়ও।
বয়সের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে অক্ষত মাধুরী ম্যাজিক
পরিচালকের কৃতিত্বের সত্তর শতাংশ ভাগীদার অবশ্যই ডিওপি ও এডিটর। থ্রিলার এমন একটা সাবজেক্ট, যেখানে এডিটিং-এর কারিকুরি কাহিনির গতির হ্রাসবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফাইট সিকোয়েন্সের এডিটিং অভূতপূর্ব। সারা ছবি জুড়ে যে অনবদ্য সেট আর ক্যামেরার কারসাজি দেখা যায়, বিশেষ করে কলাকুশলীর অভিনয়ের সূক্ষ্ম অভিব্যক্তিগুলো তুলে আনার সময়ে ক্যামেরাম্যান যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন, সেই ভাষায় অনেকদিন ছবি কথা বলেনি।

সবশেষে, অর্বুদপতি হওয়ার ফাটকাবাজির দৌড়ে ঐতিহ্যের স্মারকফলক রেখে যায় দেড় ইশকিয়া। অন্তত রাখার ক্ষমতা রাখে.ৃ। বাণিজ্যিক সাফল্য কতখানি হবে এখনই বলা যাবে না। তবে সিনেমাভুক দর্শকের মনে তৃপ্তি এনে দেবে, এটা নিশ্চিত।

First Published: Wednesday, January 15, 2014, 15:40


comments powered by Disqus