আটকে গেল `ভাল`-র গণ্ডিতে

আটকে গেল `ভাল`-র গণ্ডিতে

আটকে গেল `ভাল`-র গণ্ডিতেশর্মিলা মাইতি

ছবি: ইনকার
রেটিং: ***


পুরুষ বস আর সাবর্ডিনেট। যে-কোনও দেশের যে-কোনও জঁরের সিনেমার আকর্ষণীয় থিম। একটা সম্পর্ক যাকে সচরাচর খাদ্য-খাদক ইকোয়েশনেই ধরা হয়। অফিস পলিটিক্স ব্যাপারটা আসলে কিচেন পলিটিক্সের থেকেও ঢের বেশি ইন্টারেস্টিং। টল ফেয়ার হ্যান্ডসাম বসের সঙ্গে উচ্চাকাঙ্ক্ষী, বিউটি উইথ ব্রেনের আনফিশিয়াল অফিস-অফিস প্রেম। অন্যান্য প্রেমের প্লটের থেকে আলাদা এটাই যে, এখানে শুধু মিলন আর বিয়োগের অঙ্কের গণ্ডিতেই আটকে যায় না। এই সম্পর্কের মধ্যে দুটো খেলা আছে। একটা নিঃসন্দেহে ইঁদুর-বিড়াল গেম। আর একটা সাপ সিঁড়ি। কর্পোরেট ল্যাডার। উঁচুতে ওঠার পাসপোর্ট পেলে কে-ই বা মনে রাখে প্রথম ধাপের স্ট্রাগলে কাঁধে হাত রেখেছিল কে? গোপন প্রেম-টানাপোড়েন-কৃতঘ্নতা ব্যাপারটার মধ্যে কোথায় যেন একটা তীব্র মধুগন্ধ আছে, যার টানে কমবয়সি দর্শক ঠিক আসবেই।
আটকে গেল `ভাল`-র গণ্ডিতে
সুধীর মিশ্রর ইনকার ছবির ভরকেন্দ্র এই প্লট। অর্জুন রামপাল-চিত্রাঙ্গদা সিং জুটিকে নির্বাচন করার আগে থেকেই যে একটা ছবি এঁকে রেখেছিলেন মনে মনে। এত কাল এঁরা বলিউডে আছেন, আজ অবধি এই দুজনের মধ্যে যে এমন হট অ্যান্ড হ্যাপেনিং মেলবন্ধন হতে পারে, কেউ ভেবে উঠতে পারল না? সেদিক থেকে দেখলে বছরের শুরুতেই সুধীর মিশ্র বলিউডকে একটা সম্ভাবনাময় জুটি উপহার দিয়েছেন। আগেই জানা ছিল, সুধীর মিশ্রর ছবিতে সাদা আর কালোর মোটা দাগ থাকে না। প্রতিটি চরিত্রই তিনি ধূসর রঙে আঁকেন। নায়ক নায়িকা দোষে গুণে ভরা সাধারণ মানুষ। অর্জুনের চরিত্র রাহুল খান্না এক অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সির সিইও। অধুনা ক্রিয়েটিভ হেড মায়া, অর্থাত্‍ চিত্রাঙ্গদা সিং তাঁর বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের গুরুতর অভিযোগ আনেন। মধুর ভান্ডারকরের কর্পোরেট ছবির বিপাশা বসুর চরিত্রে আমরা যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম, তার চেয়ে মায়া অনেকটাই কঠিন মনের মহিলা। উত্তরণের ধাপ যতই কলুষিত হোক, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না। একসময়ে যে রাহুল তাঁকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিলেন, তিনিই আজ মায়ার সাবর্ডিনেট। খাদ্য-খাদক সম্পর্কে উল্টো পাক। এবার মায়ার খেলা! মনে পুষে রাখা রাগ-অভিমান উগরে দেওয়ার সময়
... আটকে গেল `ভাল`-র গণ্ডিতে
আর একটি বিষয়। হাল আমলে অন্যতম সেরা কস্টিউম ডিজাইনিং দেখা গিয়েছে ইনকার-এ। অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার স্ক্রিন প্রেজেন্স-এ অনুঘটকের কাজ করেছে কস্টিউম। নিখুঁত মেক-আপ আরও বাড়িয়েছে তাঁদের অভিনয়ের গভীরতা। ইনকার-এর সেরা পাওনা এঁরা দুজনই। প্রেমদৃশ্যে অসম্ভব স্বচ্ছন্দ। জড়তাহীন। ক্যামেরার নিপুণ ব্যবহার, লাইটিং-এর কারিকুরিতে জীবন্ত। তবে সুধীর মিশ্র গল্পের গাঁথনিতে মশলার মিশ্রণটা বড় স্টিরিয়োটাইপ করে ফেলেছেন। উচ্চাকাঙ্খী মহিলা মাত্রেই পুরুষকে ব্যবহার করবে, এটা কোনও ডিকশনারিতে নেই। তবু সংলাপ বার বার এই জায়গাতেই ঘুড়ির মতো পাক খেয়েছে। চিত্রাঙ্গদার চরিত্রচিত্রণে ধূসর রং ক্রমেই কালোর দিকে এগিয়েছে। তাই পরিণতিতে শেষ অবধি তেমন কোনও চমক-ঠমক নেই। বেশ সাদামাটা। সামান্য অধৈর্যের নমুনাও মিলছে। যাঁর কাছ থেকে চামেলি, হাজারোঁ খোয়াইশেঁ অ্যায়সি-র মতো ছবি পাওয়া গিয়েছে, তাঁর কাছে এমন প্রত্যাশা তো ছিল না...
আটকে গেল `ভাল`-র গণ্ডিতে
নিঃসন্দেহে মনে থাকবে দীপ্তি নাভালের অভিনয়। অনেক দিন বাদে এত বলিষ্ঠ চরিত্রে তাঁকে দেখা গেল। সুধীর মিশ্রর সেরা ছবির মধ্যে হয়তো জায়গা পাবে না ইনকার। তবে ভাল ছবির মধ্যে অবশ্যই থাকবে। প্রেডিক্টেবল এন্ডিং হলেও তরতর করে এগিয়ে যাওয়া গল্প মন্দ নয়। ছন্দপতন হয় না ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরেও। মনে থাকবে ইনকার-এর গানও, ছবির অন্যতম ইউএসপি।

First Published: Tuesday, January 22, 2013, 21:18


comments powered by Disqus