হাসপাতাল আবার অমানবিক

হাসপাতাল আবার অমানবিক

হাসপাতাল আবার অমানবিকদমদম প্রফুল্লনগরের সঞ্জিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিড়ের মধ্যে তাঁকে হয়ত আলাদা করে চেনা যেত না। কিন্তু পঁচাত্তর বছরের এই বৃদ্ধ আর পাঁচটা ছাপোষা বাঙালির থেকে একটু অন্যরকম চিন্তাভাবনা করতেন। দেহদানের সামাজিক আন্দোলন তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এক বছর আগে, ২০১০ সালের ১৬ জানুয়ারি নীলরতন সরকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রীতিমত চুক্তি সই করেন সঞ্জিতমোহনবাবু। ঠিক হয় মৃত্যুর পর তাঁর দেহ দান করা হবে এনআরএসে। মঙ্গলবার ২৭ সেপ্টেম্বর সঞ্জিতমোহনের মৃত্যুর পর তাঁর দেহ নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দরজায় দীর্ঘক্ষণ ঘুরে বেড়ালেন পরিবারের লোকজন। কোথাও শুনতে হল রেফ্রিজারেটর খারাপ, কোথাও-ছুটির দিন অ্যানাটমি বিভাগের দরজায় তালা।
ভোরে মহালয়া শুনতে রেডিওয় কান পেতেছেন। বাজার গেছেন। ফিরে এসে পেশেন্স খেলছিলেন সঞ্জিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তখনও পরিবারে লোকজনেরা জানেন না এরপর গোটাদিন ধরে কী হয়রানি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।চুক্তি মতো সঞ্জিতমোহনের মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের লোকেরা প্রথমে পৌঁছন নীলরতন সরকার হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, মৃতদেহ সংরক্ষিত করার রেফ্রিজারেটর খারাপ। দেহ তাঁরা নিতে পারবেন না। এনআরএস কর্তৃপক্ষ উল্টে পরামর্শ দেয় সঞ্জিতমোহনের পরিবারকে। কলেজ স্ট্রিটের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। শিয়ালদহ থেকে এরপর কলেজ স্ট্রিট। সেখানে পৌঁছেও একইরকম হয়রানির ছবি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, মহালয়া ছুটির দিন, তাই কোনও কোনও কাজ হবে না। পার্কসার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। বিরক্ত, বিস্মিত এবং হতাশ পরিবারের লোকজন ফোন করেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতাল সুপারকে। ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়- ছুটির দিন, অ্যানাটমি বিভাগের দরজায় তালা...বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে এই বিরক্তিকর টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সঞ্জিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃতদেহ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে দেওয়া সম্ভব হয়। দেহদানের মতো মহান সামাজিক আন্দোলনকারী সঞ্জিতমোহন অবশ্য জানতে পারলেন না তাঁর মৃতদেহ নিয়ে শহর কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলোর এই নির্মম, নির্লজ্জ ঠাট্টার কথা।

First Published: Tuesday, September 27, 2011, 21:16


comments powered by Disqus