মুয়াম্মর গদ্দাফি, ১৯৪২-২০১১, muammar gaddafi profile

মুয়াম্মর গদ্দাফি, ১৯৪২-২০১১

মুয়াম্মর গদ্দাফি, ১৯৪২-২০১১১৯৪২ সালে স্বৈরাচারী সুলতান ইদ্রিসকে হঠিয়ে তাঁর ক্ষমতা দখলের পর আনন্দে উত্তাল হয়ে উঠেছিলেন লিবিয়ার মানুষ। সাতাশ বছরের এক তরুণ সেনা অফিসারের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সির্তের পথে কর্নেল মুয়াম্মর গদ্দাফির রক্তাপ্লুত ছবিটা বৈদ্যুতিন মিডিয়ার দৌলতে প্রচারিত হওয়ার পর একি উচ্ছাসের পুনরাবৃত্তি দেখা গেল দেশ জুড়ে। সে উচ্ছাস `ম্যাড ডন অফ মিডল ইস্ট`-এর অত্যাচার থেকে মুক্তির।
১৯৪২-এ জন্ম সির্তের এক বেদুইন পরিবারে জন্ম গদ্দাফির। ছিল না তেমন কোনও প্রথাগত শিক্ষা। বেনগাজির এক কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বটে কিন্তু সেখানকার পাঠ শেষ না করেই যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। তখন থেকেই 'দেশের নায়ক' হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য স্পৃহা ছিল তাঁর মনে। ইজারায়েল বিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আরব দুনিয়ার নায়ক হয়ে ওঠা মিশরের নেতা জেনারেল আবদেল নাসের আর তাঁর মতাদর্শের প্রবল ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন গদ্দাফি।
ক্ষমতা দখলের পর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন অনুচরকে নিয়ে শুরু হয় গদ্দাফির দেশ শাসন। ১৯৭৭ সালে দেশের নাম পাল্টে রাখেন গ্রেট সোস্যালিস্ট পপুলার লিবিয়ান আরব জামাহিরিয়া। যার আক্ষরিক অর্থ লিবিয়া হল জনগণের রাষ্ট্র। অথচ সেই `জনগণের দেশে`ই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ দেখানোর রাস্তা ছিল বন্ধ। প্রতিবাদের কণ্ঠরোধে সিদ্ধহস্ত গদ্দাফিগণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না কোনও দিনই। লিখেছিলেন, গণতন্ত্র আসলে একটি ‘বিশাল ক্ষমতাশালী দলের একনায়কতন্ত্র।
নিজের দেশে স্বৈরাচারী শাসন কায়েমের পাশাপাশি গদ্দাফির বিরুদ্ধে বারেবারেই সন্ত্রাসবাদ ও নাশকতায় মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ওয়াশিংটন ও পশ্চিমী দুনিয়া। ১৯৮৬ সালে বার্লিনের এক পানশালায় বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা যান দুই মার্কিন সেনা। বদলা নিতে ত্রিপোলি আক্রমণের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন। প্রাণ যায় ৩৫ জনের। নিহতদের তালিকায় ছিল গদ্দফির নিজের এক দত্তক মেয়েও। ঠিক দু’বছর পরে, স্কটল্যান্ডের লকারবিতে বিমান বিস্ফোরণ হয় প্যান-অ্যাম ফ্লাইট ১০৩-এ। বিস্ফোরণে মারা যান ২৭০ জন। এই বিস্ফোরণের পিছনেও গদ্দাফির হাত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু গদ্দাফি ঘটনার দায় অস্বীকার করেন। এর পরই আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয় লিবিয়ার ওপর। অবশেষে লকারবি ঘটনার দায় স্বীকার করে লিবিয়া সরকার। বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজি হয়। ওঠে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
আসলে জন্মসূত্রে বেদুইন বর্ণময় সামরিক একনায়কের কৌশল ছিল এক পা এগিয়ে দুপা পিছনোর। কিন্তু জীবনের শেষবেলায় লিবীয় জনতার স্বতস্ফূর্ত বিদ্রোহে তাঁর পিছনোর জায়গাটাই কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল।

First Published: Friday, October 21, 2011, 11:59


comments powered by Disqus