Last Updated: November 22, 2012 19:44
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
কাল, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই ম্যাচের প্রেক্ষাপট এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে এই খেলাটাকে শুধু স্কোরবোর্ড জয় পরাজয়ে আটকে রাখা যাচ্ছে না। কিন্তু এমন কী ঘটতে চলেছে যা মুম্বই টেস্টকে বাকিদের থেকে আলাদা করে রেখেছে। সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টাতেই এই প্রতিবেদন।
১) মুম্বইকে আবার জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য: এই কদিন ধরে আরব সাগরের তীরে যা হচ্ছে তাতে বলাই যায় হতাশা আর আশঙ্কার আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে মুম্বই। মুম্বইয়ের সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের তালিকায় উপরের দিকে থাকা বালা সাহেব থাকরের মৃত্যুতে গোটা মুম্বই বিষাদনগরীতে চলে গেছিল। এরপর আবার ঠাকরেকে নিয়ে ফেসবুকে লিখে পুলিস আর শিবসেনার কোপে পড়তে হয়েছিল দুই তরুণীকে। এতে মুম্বই জুড়ে তৈরি হয়েছিল ঘৃণার আবহ। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই কসাভের ফাঁসির ঘটনাটা কাঁপিয়ে দিল বাণিজ্যনগরীকে। ২৬/১১ স্মৃতিকে কোথায় যেন ফিরিয়ে এনে দিল কসাভের ফাঁসির ঘটনা। সঙ্গে তালিবান জঙ্গিদের হুমকিটা কোথাও একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে। এই এতগুলো ঘটনা মুম্বইকে কোথায় যেন একটু থামিয়ে দিয়েছে। সেই বিষাদ, ক্ষোভ, আতঙ্কের মাঝেই মুম্বইতে এসে পড়েছে টেস্ট ক্রিকেট। ক্রিকেট মানে তো শুধু জেতা-হারা আর স্কোরবোর্ডের ওঠা নামা নয়। বরং জীবনকে জিতিয়ে দেওয়ার, জীবনকে শিখিয়ে দেওয়ার জন্যও। শুক্রবার ওয়াংখেড়ে টেস্টের দায়িত্বটাও অনেকটা। দারুণ একটা ইনিংস, অসাধারণ একটা বোলিং স্পেল, চোখধাঁধানো একটা প্রত্যাবর্তন আবার হয়তো সব কিছু ভুলিয়ে আমচি মুম্বইকে জীবনে ফিরিয়ে আনবে।
২) হোয়াইটওয়াশের সিড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ: বদলার সিরিজে শুরুটা আমেদাবাদে জয় দিয়ে হয়েছে। মুম্বই টেস্টে ভারতের লক্ষ্য হবে সেই জয়ের ব্যবধানকে ২-০ নিয়ে যাওয়া। ক্রিকেটীয় হিসাব বলে চার টেস্টের সিরিজে তুমি যদি সব কটায় জিততে চাও তাহলে দু`নম্বর ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। কারণ এই দু নম্বর টেস্ট জিতলে হোয়াইটওয়াশের সত্যি কারের স্বপ্ন দেখা শুরু করা যায়। বিপক্ষের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়া যায়। টেনসনে পড়ে বিপক্ষ ভুল করতে শুরু করে। তাই বিলেতের মাটিতে ০-৪ হারের যোগ্য জবাব দিতে হলে মুম্বই টেস্ট অনেকটা অগ্নিপরীক্ষার মত।
৩) সেওয়াগের শততম টেস্ট: একজন ক্রিকেটারের প্রথম স্বপ্ন থাকে দেশের হয়ে খেলা, দ্বিতীয় স্বপ্ন থাকে টেস্ট খেলা। তৃতীয় স্বপ্ন ব্যাটসম্যান হলে শতরান করা আর বোলার হলে পাঁচ উইকেট নেওয়া। আর এই স্বপ্নগুলো পূরণ হয়ে গেলে তাঁর দিনরাত জুড়ে থাকে একটাই চিন্তা দেশের হয়ে শততম টেস্টে খেলা। সেই দিনটাই শুক্রবার মুম্বইয়ে আসতে চলেছে বীরেন্দ্র সেওয়াগের জীবনে। মুম্বইয়ে নিজের শততম টেস্টে বীরু আবার শতরান করতে চান। নবম ভারতীয় হিসাবে শততম টেস্ট খেলার আগে সেওয়াগ একেবারে বিন্দাস মুডে। ঠিক যেমন করে বোলারদে ২০০১ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সৌরভ গাঙ্গুলি অনেকটা জোর করেই তাঁকে খেলিয়েছিলেন। অভিষেক টেস্টেই শতরান করেছিলেন বীরু। এরপর ওপেনার হিসাবে শুরু করলেন। বাকিটা তো শুধুই ইতিহাস। সেওয়াগদের ব্যাট চলা মানে স্কোরবোর্ডে খুব দ্রুত রান যোগ হওয়া, বিপক্ষ বোলারদের জিভ বেরিয়ে যাওয়া, আর অবশ্যই জয়ের ভিত তৈরি হয়ে যাওয়া। কখন যেন ভারতীয় ক্রিকেটে একটা ধারার নামই হয়ে গেল `সেওয়াগ ম্যানিয়া`। মাঝে একবার দল থেকে বাদ পড়ে যেভাবে ফিরে এসেছিলেন সেটাও একটা উদাহরণ। তাঁকে নিয়ে একটা কথা আছে টেস্টে যদি দ্বিতীয় ইনিংস বলে কিছু না থাকত তা হলে নাকি ব্যাটিং গড়ে ব্র্যাডম্যানের পরেই থাকতেন সেওয়াগ। সেই সেওয়াগের শততম টেস্ট শুক্রবারের ম্যাচে বড় `ইউএসপি`। (বীরেন্দ্রে সেওয়াগ: টেস্ট: ৯৯, রান: ৮৪৪৮, গড়: ৫০.৮৯, শতরান:২৩, অর্ধশতরান:৩২। সর্বাধিক রান: ৩১৯।)
৪
) জন্মভূমিতে সচিনের শেষ টেস্ট! মুম্বই ক্রিকেটের অন্দরে এখন এটাই ফিসফাস। সচিন তেন্ডুলকর তাঁর ঘরের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে চলেছেন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে মুম্বইকরদের সামনে সত্যিই জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন সচিন! এর পর অস্ট্রেলিয়া সিরিজের একটাও টেস্ট মুম্বইয়ে নেই। শেষ হয়ে গেল মরসুম। আর ২০১৩-১৪ মরসুমে ভারতে কোনও টেস্ট সিরিজের হবে না। সেই সময় ভারত খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডে। তারপর আসবে ২০১৪-শীতকাল। কিন্তু তখন সচিনের বয়স দাঁড়াবে ৪১। সেই বয়সে আর খেলতে পারেবন কি? অনেক মুম্বইকররাই ধরে নিয়েছেন শুক্রবারই মুম্বইতে সচিন শেষবারের তো টেস্টে নামছেন।
৫) স্পিন ভূত আর ইংল্যান্ড: কুক-প্রায়রকে বাদ দিলে ইংল্যান্ডের বাকি ব্যাটসম্যানদের দেখে মনে হচ্ছে ভারতীয় স্পিনার মানে অশ্বিন-ওঝাদের ভূতে পেয়েছে। ভুল শট নির্বাচন, বলের লেন্থ বিচার করতে ভুল করা। সব কিছু পিটারসেন, বেলরা করছেন। এটা যত বেশি দিন থাকবে ততই লাভ। এমনিতে ওয়াংখেড়ের ইতিহাস বলছে সফরকারী দলকে বরাবরই বিপদে ফেলে। কুকদের ব্যাটিং
৬) দিন্দা ধন্দ-- হঠাত্ করেই অশোক দিন্দার টেস্ট অভিষেক হওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমেদাবাদ টেস্টে যেমন ইশান্ত শর্মার চোট হঠাত্ করেই স্টান্ডবাই হিসাবে তাঁকে দলে ঢুকিয়েছিল। তবে শেষ অবধি আবার দিন্দাকে ফিরে যেতে হয়েছিল ঘরোয়া ক্রিকেটেই। সেই দিন্দায় আবার টেস্ট অভিষেকের মুখে। উমেশ যাদবের পরিবর্তে তিনি দলে এসেছেন। ইশান্ত শর্মা যদি ফিটনেস পরীক্ষায় পাস না করেন তাহলে হয়তো টেস্ট ক্রিকেট অনেক দিন বাদে ফের এক বাঙালিকে দেখতে পাওয়া যাবে। তবে হতাশার হলেও সত্যি রাতের খবর দিন্দার টেস্ট অভিষেক হচ্ছে না।
First Published: Thursday, November 22, 2012, 19:48