Last Updated: December 11, 2013 10:16

ক্যালন্ডারের কিছু কিছু দিন নিজের গুণেই হয়ে ওঠে ভেরি ভেরি স্পেশাল। অনেক সময় কাগজে ছাপা সংখ্যায় চোখ বোলালে তা বোঝা যায় না। তবে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, সত্যি তো কিছু একটা আছে। তেমনই আজকের দিনটা। ছন্দ আর গণিতের অনুশাসনে ভরা একটা মজার দিন।
১১/১২/১৩ - একি তারিখ! নাকি সুকুমার রায়ের ছড়া উড়ে এসে বসেছে ক্যালেন্ডারের বছর শেষের পাতা ঝরা ডালে!
বাসাংসি জীর্ণানির নিয়ম মেনে আর কয়েকদিন পরেই অবসর নেবে ২০১৩-র ক্যালেন্ডার। কিন্তু যাওয়ার আগে সে দিয়ে গেল এমন এক দিন, যা দেখলে চোখের আরাম। মনে মনে আওড়ালে মনের আরাম।
ক্যালেন্ডারের ইতিহাসে ছন্দ নতুন নয়। ১০-১০-১০, ১১-১১-১১, ১২-১২-১২, এমন তো আমরা আগেই দেখেছি। কিন্তু আজকের দিনটা যেন তার থেকেও চোস্ত। কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জনৈক সাহিত্যিক বলেছিলেন, কবিতা হল দ্য বেস্ট ওয়ার্ড ইন বেস্ট অর্ডার। আজকের দিনটার দিকে তাকালে সেই কোটেশনটাই মনে এসে যায়।
ক্যালেন্ডারের পাতায় সংখ্যা মানেই কড়া অনুশাসনে দাঁড়িয়ে থাকা এক একটা প্লেটুন। কিন্তু আজকের দিনটা দেখুন। এক দুই তিনের অনুশাসন আছে। আবার ১১-১২-১৩ ছন্দও আছে। আর ইউনিটি! সেদিক দিয়ে যেন জগন্নাথ সুভদ্রা আর বলরাম। সারাদিন কাঁধে কাঁধ সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে সংখ্যা সাম্রাজ্যের তিন ভাই বোন।
এখনও যাঁরা ভাবছেন, এতে আর ভেরি ভেরি স্পেশাল ডে হওয়ার কী হল? সংখ্যার হেরফেরে তো কত কিছুই হয়। তাঁদের জানিয়ে রাখা ভাল, এমন দিন কিন্তু এই শতাব্দীতে আর আসবে না। কারণ এই তারিখের ভিতর গান ঢুকে গিয়েছে। একবার আওড়ালে গুণগুণ করতে আপনি বাধ্য।
এক দুই তিন করে মাস। এক দুই তিন করে দিন। এভাবে জপের মালা ঘোরাতে ঘোরাতে আজ সময় হয়েছে এগারো-বারো-তেরোর। কত কাজের খোঁজে সারা বছর ক্যালেন্ডারের মুখোমুখি দাঁড়াই আমরা। ছুটির আমেজে মোড়া কাকাতুয়ার লাল ঠোঁটের মতো কয়েকটা সংখ্যা। বাকিগুলো কালো। একেবারে কেজো দিন। কিন্তু অনেক সময় তার মধ্যেও থাকে হীরের দ্যুতি। যেমন মিতুনের মুখে ভাত। পিউর সঙ্গে প্রিয়ায় প্রথম সিনেমা।
কাজ আর ছুটির হিসেব মেনে আজকের দিনটা কালো। তবু এর মধ্যেও রয়ে গিয়েছে দ্যুতি। সেই দ্যুতি ছন্দের। সেই দ্যুতির মধ্যে লুকিয়ে আছে বিরলের মধ্যে বিরল হওয়ার গর্ব। একই সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে শতাব্দীতে আর না পাওয়ার বিরহ।
তাই আয়োজনও হয়েছে অনেক। সবচেয়ে বেশি হিড়িক পড়েছে বিয়ের। চার হাত এক করার পরম লগ্নকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন আজকের দিনটিকে। দিনভর গণবিবাহের তোড়জোড়। অনেকে আবার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলে আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। সময়ের আগেই নবজাতককে পৃথিবীর আলো দেখাতে হবে এমন ছন্দের দিনে।
এত কাণ্ড দেখে কী ভাববে বিদায় নিতে চলা ২০১৩র ক্যালেন্ডার? অনাদি সময়ের সাম্রাজ্যে তার চাকরি সামান্য চৌকিদারের। তবু সেই সামান্য চৌকিদারই বিদায়বেলায় দিয়ে গেল এক মধুর উপহার। আগাগোড়া ছন্দে ভরা একটা দিন। হৃদ মাঝারে রেখে দেওয়ার দিন।
নিউইয়ারকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে আবেগে ভেসে যাই আমরা। কিন্তু একথা তো সত্যি, যে থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর থেকে ফার্স্ট জানুয়ারিতে যাওয়ার চৌকাঠ আপনি প্রতি বছর পাবেন। কিন্তু এগারো বারো তেরোর মতন দিন এ শতাব্দীতে আর পাবেন না। তাই করে নিতেই পারেন ভেরি ভেরি স্পেশাল ডের জন্য ভেরি ভেরি স্পেশাল প্ল্যানিং।
First Published: Wednesday, December 11, 2013, 10:16