Last Updated: December 12, 2012 20:28

লন্ডনের ট্র্যাফালগার স্কোয়ারই হোক বা নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন। সারা পৃথিবীকেই পণ্ডিত রবি শঙ্কর ভরিয়ে তুলেছিলেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায়। ভারতীয় সঙ্গীতকে এভাবে বিশ্বের দরবারে প্রথম হাজির করেছিলেন রবিশঙ্করই। পরিচিত হয়েছিলেন ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের দূত হিসেবে।
জন্ম ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল। বারানসীতে। বাবা শ্যাম শঙ্কর, মা হেমাঙ্গিনী দেবী। দাদা উদয়শঙ্কর ছিলেন কীংবদন্তী নৃত্যশিল্পী। তাঁর ব্যালে ট্রুপের সঙ্গে রবিশঙ্কর ইউরোপ সফরে যান মাত্র ১০ বছর বয়সে। ১৯৩৮ সালে প্রবেশ করেন যন্ত্রসঙ্গীতের দুনিয়ায়। তালিম শুরু হয় প্রখাত মাইহার ঘরানার স্রষ্টা আলাউদ্দিন খাঁয়ের কাছে। রবিশঙ্করের সঙ্গেই সেসময় তালিম নিয়েছিলেন আলি আকবর খান, আলাউদ্দিন খানের কন্যা অন্নপূর্ণা এবং নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীতশিক্ষা শেষে ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই `সারে জাঁহাসে আচ্ছা` গানটিতে সুর করে সাড়া ফেলে দেন।

এরপর বিদেশের দরবারে ভারতীয় সঙ্গীতকে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রবেশ করেন চলচ্চিত্র জগতেও। সৃষ্টি হয় পথের পাঁচালির অমর আবহ সঙ্গীতের মতো বেশ কিছু সুরের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যার্থে নিউইয়র্কে আয়োজিত হয় ঐতিহাসিক কনসার্ট। বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিটলসকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠিত সেই কনসার্ট ফর বাংলাদেশের শুরু হয় রবিশঙ্কর ও ওস্তাদ আলি আকবরের সঙ্গে যুগলবন্দী `বাংলা ধুন` দিয়ে। বাংলার লোকগীতি ও পল্লিগীতির সুর থেকে তাঁর সৃষ্ট নতুন সুরে ভেসে যায় পাশ্চাত্যের সঙ্গীত দুনিয়া। রবিশঙ্করের কাছেই মার্গ সঙ্গীতের তালিম নিতে শুরু করেন বিটলস্ খ্যাত জর্জ হ্যারিসন। ইউরোপ-আমেরিকার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পরে ভারতীয় সঙ্গীত।
ঐতিহ্যধর্মী ধ্রুপদী সঙ্গীতের মাধ্যমেই নতুনভাবে দেশকালের সীমা ছাড়িয়ে যান রবিশঙ্কর। ভারতরত্নের সঙ্গে অনন্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে রবিশঙ্করের নাম উঠে আসে গিনেসবুকে। সঙ্গীত জগতের সেরা সম্মান গ্র্যামি পান তিনবার। মনোনীত হয়েছিলেন ২০১৩ সালের গ্র্যামি পুরস্কারে জন্যও। কিন্তু তার আগেই চলে গেলেন তিনি। মঙ্গলবার সঙ্গীতের দুনিয়ার অনন্য সেই নক্ষত্রের মৃত্যু হল সান দিয়েগোর হাসপাতালে।
First Published: Wednesday, December 12, 2012, 20:28