Last Updated: November 8, 2012 14:35

শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিসি অভিযান চলেছিল দুবরাজপুরে। গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেঙ্গল এমটার মাটি কাটার মেশিনটি উদ্ধার করার জন্য শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই পুলিসকে চাপ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে পুলিসের ওপর স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের চাপ ছিল বলেও জানা গেছে। দুবরাজপুরে গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনার পরই বীরভূমের পুলিস সুপার হৃষিকেশ মিনাকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিস সুপার বলেন, তাঁর ওপর চাপ ছিল। চাপের কারণেই তিনি লোবা গ্রামে পুলিসি অভিযান চালাতে বাধ্য হন। দুবরাজপুরে পুলিসি অভিযান হলে পাল্টা হামলা হতে পারে। জেলা গোয়েন্দা রিপোর্টে এই তথ্যের উল্লেখ ছিল বলেও খবর। কিন্তু, শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশে গোয়েন্দা রিপোর্ট উপেক্ষা করেই পুলিস সুপার অভিযান চালাতে বাধ্য হন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে গতকালই লোবা গ্রামের ঘটনায় আহতদের দেখতে সিউড়ি হাসপাতালে গিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে গ্রামবাসীদের প্রত্যক্ষ কোনও যোগাযোগ নেই। সিপিআইএম-এর প্ররোচনাতেই পুলিস গোটা ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকী কংগ্রেসের একাংশেরও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভবনাকে উড়িয়ে দেননি শিল্পমন্ত্রী। বাইরে থেকে তীর ধনুক এনে পুলিসের সঙ্গে গ্রামবাসীদের খণ্ডযুদ্ধের ঘটনাটি আদপেও গ্রামবাসীদের স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিবাদ ছিল না বলেই দাবি করেন তিনি।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পমন্ত্রী দাবিকে ভিত্তিহীন বলে কার্যত নাকচ করে দিয়েছেন কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সভাপতি ফেলারাম মণ্ডল। ফেলারাম মণ্ডল বলেন, পুলিসের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় রুখে দাঁড়িয়েছিল লোবাগ্রামের বাসিন্দারাই। তাঁর দাবি, গোটা ঘটনার সময়ে গ্রামে কোনও বহিরাগত ছিলেন না। কৃষিজমি বাঁচাতে সোমবার পুলিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। ফলত পুরো ব্যাপারটার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দায় এড়ানোর চেষ্টা। উপরন্তু বুধবার সিউড়ি হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেলেও লোবা গ্রামে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
গতকালই দুবরাজপুরে ঘটনার পরিকল্পনা কারা করেছে, তা খতিয়ে দেখতে এডিজি আইনশৃঙ্খলার নেতৃত্বে তদন্ত হবে বলে মহাকরণে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গেই জমি আন্দোলনে মা-মাটি-মানুষের সরকার গুলি চালিয়েছে, এই তকমা যাতে না লাগে, সাংবাদিক সম্মেলনে আগাগোড়াই সেদিকে নজর ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। প্ররোচনার মুখে পড়েও দুবরাজপুরে পুলিস বাড়াবাড়ি করেনি। ঘটনায় পুলিসকে এভাবেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার বীরভূমে জমি আন্দোলন ঠেকাতে চলায় পুলিসের গুলি। গুলিতে জখম হয়েছেন ৬ জন গ্রামবাসী। আহতদের সকলকেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঁদের মধ্যে দু`জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। মহাকরণে স্বরাষ্ট্রসচিব প্রথমে অবশ্য পুলিসের গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেন। দুপুরে দুবরাজপুরে পুলিস-গ্রামবাসী সংঘর্ষের কথা স্বীকার করে নিলেও মহাকরণে দাঁড়িয়ে পুলিসের গুলি চালনার ঘটনা অস্বীকার করেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী হাসপাতাল থেকে পাওয়া মেডিকাল রিপোর্টেও `বুলেট ইনজ্যুরি`র উল্লেখ নেই বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে ২৭ জন পুলিসের আহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এর থেকেই বোঝা যায় যে পুলিস যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।" তাহলে পুলিস কীভাবে গ্রামবাসীদের আক্রমণ মোকাবিলা করল? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মিলল না স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে।
তার কিছুক্ষণ আগেই ২৪ ঘণ্টার পক্ষ থেকে যখন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তিনি বলেন, দুবরাজপুরে পুলিস গুলি চালিয়েছে। ঘটনাটি সমর্থনযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে স্বরাষ্ট্রসচিবের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান পরিবর্তন করেন শতাব্দী দেবী। মহাকরণে বাসুদেব বাবুর মন্তব্যের পরে সাংসদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমি জানি গুলি চলেনি।"
First Published: Thursday, November 8, 2012, 15:52