সেনা অভ্যুত্থানের অশনি সঙ্কেত পাকিস্তানে, উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি

সেনা অভ্যুত্থানের অশনি সঙ্কেত পাকিস্তানে, উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি

সেনা অভ্যুত্থানের অশনি সঙ্কেত পাকিস্তানে, উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লিবিচারবিভাগ এবং সেনা বাহিনীর জোড়া অভিঘাতে ফের অনিশ্চিত পাক গণতন্ত্রের ভাগ্য! পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় সঙ্গত কারণেই উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানান হয়েছে, পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ভারত।
মিডিয়ার সামনে সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ আশফাক কায়ানি এবং আইএসআই প্রধান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুজা পাশার বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক আচরণের অভিযোগ করায় বুধবার পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছিল পাক ফৌজ। যদিও সেই হুমকি গায়ে না মেখে সেনাপ্রধান কায়ানির ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সচিব, লেফটেন্যান্ট জেনারেল নঈম খালিদ লোদিকে বেআইনি কার্যকলাপ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টার অভিযোগে বরখাস্ত করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

এই ঘটনার পর ফের প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেনাবাহিনী। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর ঘটনার পরিণতি ভাল হবে না। সেই সঙ্গে নবনিযুক্ত প্রতিরক্ষা সচিব নার্গিস শেঠির সঙ্গে কোনওরকম সহযোগিতা না করার কথাও জানানো হয়েছে রওয়ালপিন্ডি-স্থিত সেনা সদর দফতরের তরফে। বৃহস্পতিবার রওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরে পাক সেনাবাহিনীর সমস্ত কোর কম্যান্ডারদের জরুরি বৈঠকও করেন জেনারেল কায়ানি। অন্য দিকে গিলানি সরকারের রক্তচাপ বাড়িয়ে প্রতিরক্ষা সচিব পদ থেকে নঈম খালিদ লোদিকে বরখাস্ত করার সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা একটি মামলা এদিন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে পাক সুপ্রিম কোর্ট।
সেনা অভ্যুত্থানের অশনি সঙ্কেত পাকিস্তানে, উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি
সব মিলিয়ে চার বছরের গণতান্ত্রিক শাসনের পর পাকিস্তান ফের সামরিক অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হতে চলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিশেষত বিগত এক পক্ষকালের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী গিলানি যেভাবে সেনাকর্তাদের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন তাতে ইসলামাবাদের কুর্সি থেকে তাঁর বিদায় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে দুবাই পাড়ি দিয়েছেন পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। ফলে সেনা অভ্যুত্থানের জল্পনা আরও দৃঢ় হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী গিলানি। পিপিপি'র পাশাপশি শাসকজোটের সদস্য আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কায়েদ-ই-আজম)-এর নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা জ্ঞাপনের পাশাপাশি এদিনই জাতীয় আইনসভা (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি)-র বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাক মিডিয়ার একাংশের দাবি, পাক জাতীয় আইনসভার বিশেষ যৌথ অধিবেশন ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেবেন গিলানি। আর তারপরই পদত্যাগ করবেন তিনি। তবে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শিবিরের তরফে গোপনে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। খবর মিলেছে, সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মুশারফের ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কায়েদ-ই-আজম) সভাপতি তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি সুজাত হুসেন গোপনে গিলানি-কায়নির মধ্যে রাজনৈতিক দৌত্য শুরু করেছেন।

নিশ্চিন্তে নেই প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিও। মোমোগেট কেলঙ্কারির পর ক্রমশই তাঁর কার্যকলাপ নিয়ে অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছিল সেনা বাহিনীতে। এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখে পড়ে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিতে পারেন বলে বুধবার সকাল থেকেই ক্রমশ এই জল্পনা দানা বাঁধে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফারহাতুল্লা বাবর `পদত্যাগের সম্ভাবনা` উড়িয়ে দিলেও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র নেতৃত্বাধীন শাসক জোটের টালমাটাল অবস্থাটা প্রকট হয়েছে ইতিমধ্যেই। এদিন তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা ইমরান খান প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে অবিলম্বে নতুন সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
সেনা অভ্যুত্থানের অশনি সঙ্কেত পাকিস্তানে, উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি
২০০৭ সালে তত্‍কালী সেনা শাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফের সময় এক সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি মামলা বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে জারদারির বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও ছিল। কিন্তু ২০০৯-এর ডিসেম্বরে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ ক্ষমা বাতিল করে মামলাগুলি ফের চালুর আদেশ দেয়। এরপর থেকে মামলাগুলো পুনরায় চালুর জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের আইনি সুরক্ষার দোহাই দিয়ে জারদারির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা পুনরায় চালুর অস্বীকৃতি জানান পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।

প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে মঙ্গলবার সরাসরি তাঁকে `অসত্‍` হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পাক সুপ্রিম কোর্ট। বেনজির ভুট্টোর জমানায় `মিস্টার টেন পার্সেন্ট` নামে কুখ্যাত জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলাগুলি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তরফেও গিলানি সরকারের উপর ক্রমশ চাপ বাড়ান হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রবল চাপের মুখে পড়ে আসিফ আলি জারদারি প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে দুবাই পাড়ি দিতে পারেন বলে পাক মিডিয়ার একাংশের তরফে প্রচার করা হয়।


First Published: Thursday, January 12, 2012, 17:07


comments powered by Disqus