লোকসভায় পেশ দীনেশের রেল বাজেট

লোকসভায় পেশ দীনেশের রেল বাজেট

লোকসভায় পেশ দীনেশের রেল বাজেটরেলমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রথম রেল বাজেট পেশ করার জন্য এগারোটা বাজার আগেই সংসদ ভবনে পৌঁছে গেলেন দীনেশ ত্রিবেদী। রীতি মেনে লোকসভায় ঢোকার আগে বাজেটের বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ না খুললেও রেলকে 'সোনার মতোই জাতীয় সম্পদ' বলে বর্ণনা করে তিনি জানান, রেলের উন্নতি হলেই দেশের জিডিপি-বৃদ্ধি সম্ভব। এদিন কয়লার দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিজেডি সাংসদদের বিক্ষোভের জেরে বেলা ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। ফের অধিবেশন শুরুর পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা-মাটি-মানুষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রেল বাজেট পেশ শুরু করেন রেলমন্ত্রী। সেই সঙ্গে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীকে।

ভাঁড়ে মা ভবানী! এক কথায় বলতে গেলে এই মুহূর্তে ভারতীয় রেলের হাঁড়ির হাল এটাই। `পপুলিজম`-এর রাজনীতির দায় মেটানোর জন্য গত এক দশক ধরে বাড়ানো হয়নি যাত্রীভাড়া। সেই সঙ্গে এসেছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের চাপ। পণ্য মাশুল বাড়িয়ে ঘাটতি মেটানোর প্রাথমিক চেষ্টার ফল হয়েছে উল্টো। সামগ্রিকভাবে রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ইঙ্গিত মেলায় সেই পথ ছাড়তে হয়েছে। এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতির মধ্যেই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে অর্থ-সংস্থানের দিশানির্দেশিকা ছাড়াই একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। ফলে আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত অসঙ্গতি। অপারেটিং রেশিও (ব্যয় এবং আয়ের অনুপাত) পৌঁছেছে প্রায় ৯১ তে। এই পরিস্থিতিতে এদিনের রেল বাজেটে সমতা রক্ষাই রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ, প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির ব্যবধানটুকু কমিয়ে এনে স্বপ্নভঙ্গের সম্ভাবনাটা আপাতত ঠেকিয়ে রাখার।

অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, প্রবল আর্থিক সঙ্কটে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির জন্য রেল বাজেটে দরাজহস্ত হতে চলেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বাজেট তৈরির আগে থেকেই ব্যারাকপুরের দলীয় সাংসদকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
লোকসভায় পেশ দীনেশের রেল বাজেট
সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে গত শুক্রবার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের চলতি প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ যেন কোনও ভাবেই না কমানোর নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্যের তৃণমূল সাংসদরা নিজেদের এলাকার জন্য যে সব প্রকল্পের জন্য দরবার করেছেন, এবং যাত্রী সুরক্ষা কমিটি, আধুনিকীকরণ কমিটি এবং যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য কমিটি যে সমস্ত সুপারিশ করেছে, রেল বাজেটে যাতে সেগুলি অগ্রাধিকার পায় নিজের উত্তরসূরীকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেল বাজেটে উল্লিখিত হয়েছিল `ভিশন ২০২০`-কথা। দীনেশ ত্রিবেদীকেও সেই দিশানির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দলনেত্রীর এই আদেশ মানার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন টেক্সাস ইউনিভার্সিটি`র এই এমবিএ। কিন্তু প্রশ্ন সেই একটাই। দিনের শেষে `ব্যালান্স শিট` মিলবে কী ভাবে? তৃণমূলের 'জনদরদী' রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্কারমুখী নীতি রূপায়ণ না করতে পারলে আরও খারাপ হবে রেলের কোষাগারের হাল। এই পরিস্থিতিতে দলের নীতিগত বৃত্তের মধ্যে থেকেই সরাসরি ভাড়া না বাড়িয়ে নিরাপত্তা বা আধুনিকীকরণ খাতে সারচার্জ বসিয়ে বছরে ৪-৫ হাজার কোটি টাকার সংস্থান করতে পারেন দীনেশ ত্রিবেদী।




First Published: Wednesday, March 14, 2012, 12:16


comments powered by Disqus