দেশের একধিক হাই প্রোফাইল মামলার রায় দানকারী বিচারপতি আজ যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত

দেশের একধিক হাই প্রোফাইল মামলার রায় দানকারী বিচারপতি আজ যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত

দেশের একধিক হাই প্রোফাইল মামলার রায় দানকারী বিচারপতি আজ যৌন নির্যাতনে অভিযুক্তটু জি মামলা থেকে মহারাষ্ট্র সরকারের থেকে ১০ লক্ষ টাকার জরিমানা আদায়। দেশের একাধিক মামলায় ঐতিহাসিক রায়ের সঙ্গেই যুক্ত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলির নাম। বিচারপতির পদ থেকে অবসরের পরও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে একাধিক উল্লেখযোগ্য রায়ও দিয়েছেন তিনি।

জীবনটা শুরু করেছিলেন শিক্ষক হিসেবে। ১৯৭০-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশের পর অবশ্য তিনি আইনকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন অশোক গাঙ্গুলি। কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন ১৯৭২-এ।

১৯৯৪-য়ে কলকাতা হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হন অশোক কুমার গাঙ্গুলি। তিন মাসের মধ্যেই বদলি হয়ে যান পাটনা হাইকোর্টে। এরপর ওড়িশা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন ২০০৭ সালে। দু`বছর পর মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচাপতি হন অশোক কুমার গাঙ্গুলি। ওই বছরই ১৭ ডিসেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। শীর্ষ আদালতে তিন বছরেরও বেশি সময়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন বিচারপতি গাঙ্গুলি। যার মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচাইতে বিখ্যাত দুহাজার বারোয় টুজি কেলেঙ্কারি মামলার রায়। স্পেকট্রাম লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া ওই শুনানিতে অশোক গাঙ্গুলির তীব্র ভর্ত্‍‍সনার মুখে পড়তে হয়েছিল সিবিআই এবং তত্‍কালীন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজাকে।

২০১০-এ মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের বিরুদ্ধে একটি মামলায় মহারাষ্ট্র সরকারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন অশোক গাঙ্গুলি। দাপটের সঙ্গে শীর্ষ আদালতে বিচারের দায়িত্ব সামলে আসা এই বিচারপতিই এরাজ্যের মানবাধিকার কমিশনে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। রাজ্যে মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব নিয়েও বেশ কিছু নজরকাড়া নির্দেশ দেন অশোক কুমার গাঙ্গুলি।

বেলপাহাড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিলাদিত্য চৌধুরীর গ্রেফতারি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য।প্রশাসনিক পদক্ষেপের নিন্দা করে ওই ঘটনায় শিলাদিত্য চৌধুরীকে দুলক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় অশোক গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন মানবাধিকার কমিশন।

কার্টুনকাণ্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেফতারির পরও ধৃতদের পঞ্চাশ হাজার করে ক্ষতিপূরণ এবং দোষি পুলিস অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন। রাজ্যে বিষমদে মৃত্যুর ঘটনায় আবগারি দফতরের কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও আসে মানবাধিকার কমিশনের তরফে।

পুলিস হেফাজতে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয় কমিশন। আইন অমান্যে গ্রেফতার করে সুদীপ্ত গুপ্তদের যে ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তারও নিন্দা করা হয়। মানবাধিকার কমিশনের একের পর নির্দেশে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যায় রাজ্য। প্রকাশ্যে আসে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত।

২০১৩-র শেষ দিকে অশোক গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের কমিটি তৈরি এবং কমিটির রিপোর্ট ঘিরে বিতর্ক আরও দানা বাঁধে। মানবাধিকার কমিশন থেকে অশোক গাঙ্গুলির অপসারণের দাবিতে সরব হয় রাজ্যের শাসক দল সহ কেন্দ্রীয় রাজনীতির বিভিন্ন মহল। সেই চাপের মুখেই অবশেষে ছই জানুয়ারি ইস্তফা দেন অশোক গাঙ্গুলি।

First Published: Tuesday, January 7, 2014, 20:27


comments powered by Disqus