Last Updated: October 23, 2012 14:06

- সুদীপ্ত সেনগুপ্ত
সাহিত্যে সত্যিকারের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম ভালবাসা ছিল তাঁর কবিতা। গল্প, কবিতা, উপন্যাস নিয়ে তাঁর বইয়ের সংখ্যা দুশোরও বেশি। আধা-বোহেমিয়ান জীবন যাত্রার সঙ্গে তিনি অবাধে মেলাতে পেরেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব। দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, জীবনের শেষ চার বছর সাহিত্য আকাদেমির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। বাংলা সাহিত্যের পুরো একটি প্রজন্ম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে অভিভাবক হিসাবে পেয়েছে। তাঁর মৃত্যু আক্ষরিক অর্থেই বাংলা সাহিত্যে একটি যুগের অবসান।
উনিশশো পঁয়ষট্টি সালে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ। বাংলা সাহিত্যে এক মহানক্ষত্রের জন্মের আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা সেই উপন্যাসে ছিল। তার পর থেকেই সাহিত্যিক হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত সুনীল। যদিও মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করা চার যুবকের একজন হওয়ার সুবাদে কবি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন আগেই। তখন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, শরত্কুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর সতীর্থ। কমলকুমার মজুমদার তাঁদের গুরু। তিনি শিষ্যদের ওয়েলিংটনের মোড়ে হেমলক পান করা শেখান। বাংলা আধুনিক কবিতার পত্রিকা কৃত্তিবাসের অন্যতম জনক সুনীল। রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করেই বাংলা কবিতা তখন আলাদা পরিচয় খুঁজছে। পরে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের মুল্যায়নে তাঁদের অপরিণত বয়সের ভুল অকপটে স্বীকার করেছেন সুনীল।
স্কলারশিপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান সুনীল। বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের দরজা খুলে যায় তখনই। বাংলায় লিখেছেন বটে, কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার অগ্রণী সাহিত্যের তিনি ছিলেন মনোযোগী পাঠক।
লেখক হিসাবে চুড়ান্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন সুনীল। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে লিখতে বসতেন, গত পঞ্চাশ বছর ধরে অবিরল লিখে চলেছেন তিনি। শিশু ও কিশোর সাহিত্যে তাঁর সৃষ্ট কাকাবাবু এই বছরও অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়েছেন। পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। কলকাতায় এসেছেন দেশভাগের সময়কার টালমাটাল পরিস্থিতিতে।
কলকাতার নাগরিক জীবনকে তিনি অনন্য সাধারণ মসৃণতায় নিয়ে এসেছেন সাহিত্যে। পরিণত বয়সে এসে রচনা করেছেন সেই সময়, প্রথম আলো অথবা পূর্ব পশ্চিমের মতো মডার্ন ক্ল্যাসিক। বাংলা সাহিত্যে বিরল গবেষণা এই বইগুলিকে সমৃদ্ধ করেছে। আবার নীললোহিত ছদ্মনামে পায়জামা পরা ভবঘুরে বেকার চরিত্রটিকে একটা গোটা প্রজন্মের কাছে প্রায় আইকন করে তুলতে পেরেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
তবে কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। হঠাত্ নীরার জন্য থেকে তিনি এক রহস্যময়ীর সঙ্গে পরিচয় করালেন বাঙালি কবিতার পাঠকদের। পাঁচ দশক ধরে গবেষণা চলছে কোন নারী এই নীরা? সুনীলের মৃত্যুতেও হয়তো সেই গবেষণার অবসান হবে না।
First Published: Tuesday, October 23, 2012, 15:39