সাহিত্যে নোবেল পেলেন টমাস ট্রান্সট্রোমার

সাহিত্যে নোবেল পেলেন টমাস ট্রান্সট্রোমার

সাহিত্যে নোবেল পেলেন টমাস ট্রান্সট্রোমারএবছর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হলেন সুইডেনের কবি টমাস ট্রান্সট্রোমার। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ট্রান্সট্রোমারের কবিতায় মানুষের অন্তঃসত্তার সঙ্গে বহির্জগতের সম্পর্ক মূর্ত হয়েছে। তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণে বাস্তবতার এক নতুন দিশা পেয়েছে সমাজ।
কবির মন, সে বোধহয় বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় সরণি। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি দিতে গিয়ে এবারে সেই রহস্য মোড়া পথ ধরেই হাঁটল নোবেল কমিটি। তাঁরা এমন এক কবিকে পুরস্কৃত করল, যাঁর ব্যক্তিজীবন আর কর্মজীবন অদ্ভুত সব সমাপতনে ভরা। কথায় বলে আশিতে আসিও না। অথচ এই আশি বছর বয়সেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি পেলেন সুইডেনের কবি টমাস ট্রান্সট্রোমার। উনিশশো একত্রিশ সালের পনেরোই এপ্রিল স্টকহমে জন্মেছিলেন টমাস। জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই বাবা তাঁকে ও মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। চরম লড়াই আর প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল জীবনের পথচলা। সেই স্টকহম থেকেই এল জীবনের অনন্য স্বীকৃতি। উনিশশো ছাপান্ন সালে সাইকোলজিতে স্নাতক হন টমাস। মানসিক প্রতিবন্ধী, অপরাধী, মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। মানুষের মন নিয়ে চর্চা করতে করতে মাঝে মাঝে নিজের মনকেই হারিয়ে ফেলতেন ভাবনার বিচিত্র সব অয়নপথে। আর সেই ভাবনা থেকেই রসদ পেতে লাগল তাঁর কবিতা। উনিশশো ছিষট্টিতে উইন্ডোজ অ্যান্ড স্টোনস, উনিশশো চুয়াত্তরে বাল্টিকস, দুটি কাব্যগ্রন্থে সাড়া ফেলে দিলেন টমাস। অবশ্য শুরুটা করেছিলেন আরও আগে। তেইশ বছর বসয়ে টমাসের লেখা সেভএনটিন পোয়েমস পাঠকের যথেষ্ট সমাদর পেয়েছিল। তাঁর কবিতায় মানুষই হয়ে উঠেছে মূল উপজীব্য। রূপকের সম্ভারে ফুটে উঠেছে জীবনের অন্দরমহল। অয়নপথের মতোই বিচিত্র সেই পথ। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে রসদ তুলে এনেছেন কবিতায়। কল্পনার রঙে রাঙিয়ে তা পরিবেশন করেছেন নিত্য জীবনের ছবি হিসেবে। কবিতার সেইসব ফ্রেমে কখনও বিষয় মানুষের অধ্যাত্মচেতনা, আবার কখনও তার অন্তঃসত্তার সঙ্গে বহির্জগতের সম্পর্ক। বেশ চলছিল। কিন্তু সুর কাটল উনিশশো নব্ব্ই সালে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের অর্ধেকটা পঙ্গু হয়ে যায় টমাসের। কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু থেমে থাকল না কলম। কলমের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গী তখন পিয়ানো। ডান হাত অচল। তাই বাঁহাতে কবিতা লেখা। বাঁ হাতেই পিয়ানো বাজানো। দুই সঙ্গীকে নিয়ে চলতে লাগলেন টমাস। দুহাজার চার সালে দ্য গ্রেট এনিগমা কাব্যগ্রন্থের মুখবন্ধে তিনি লিখলেন, ঘুম থেকে ওঠা যেন স্বপ্নরাজ্য থেকে প্যারাশুটে করে মহাপতন। বিশ্বের পঞ্চাশটি ভাষায় টমাসের কবিতার অনুবাদ হয়েছে। তাঁর প্রথম দিকের কবিতায় বারবার প্রেম, প্রকৃতির প্রসঙ্গ এসেছে। পরের জীবনে সংঘাত যত বেড়েছে, ততই কবিতায় ফিরে ফিরে এসেছে মৃত্যু ব্যাধি আর অস্তিত্ববাদ।
বিকেলের পড়ন্ত আলোয় রোগাসোগা অসুখী কবিকে কেউ কেউ মানুষ ভেবে ভুল করে খুব। লিখেছিলেন কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কবি টমাস ট্রান্সটোমারের জীবনকথা শুনলে মনে হয়, সত্যি, অনেক কবি বোধহয় অতিমানবও হন।

First Published: Saturday, October 8, 2011, 15:08


comments powered by Disqus