Last Updated: December 20, 2013 10:47

আগামী বছর আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা পশ্চিমী দুনিয়ার। সেই কারণে বিভিন্ন খাতে আস্তে আস্তে অনুদানও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে উন্নয়নমূলক কাজর্কম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। মহিলাদের জন্য আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম হেরাত জেল নিয়েও সেই আশঙ্কাই দানা বাঁধছে।
মহিলাদের জন্য আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম হেরাত জেলে এখন কয়েদি সংখ্যা ১৬৯। খুন, যৌন হেনস্থা, অপহরণ, বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া বা নৈতিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এই রকমই এক কয়েদি লাইলুমা। গত দু`বছর ধরে ছোট মেয়েকে নিয়ে জেলেই পড়ে রয়েছেন তিনি। সরকার এ বার আমার মামলার নিষ্পত্তি করুক। দু বছরে ধরে আটকে রয়েছি। কিন্তু মামলার কিছুই হয়নি। আমাদের দিকে সরকারের কোনও নজরই নেই। আমাদের সমস্যাগুলি এ বার একটু দেখুক।
বৌদিকে খুনের দায়ে ছ`বছরের শাস্তি হয়েছে সিমা আলিজাদার। আট বছরের সাজা হয়েছে তাঁর মার। মা আর আমার বিরুদ্ধে বৌদিকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এ সব সত্যি নয়। আমরা কিছুই করিনি। বৌদির পেটের অসুখ হয়েছিল। কিন্তু সরকার তাঁর মৃত্যুর দায় আমাদের উপরে চাপিয়েছে। দু`বছর ধরে আমরা এখানে আছি।
যতদূর জানা যাচ্ছে, এই দুই কয়েদিই জোর করে বিয়ে এবং বিয়ের পর অত্যাচারের জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। তাঁদের মতো অনেকেই এই ধরনের ঘটনার জন্য পালিয়ে পরে জিনা বা অবৈধ যৌন সম্পর্কের অভিযোগে অভিযুক্ত। গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁদের যন্ত্রণাদায়ক কৌমার্যের পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হলেও অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করে রাখা হয়। ধর্ষিতা মহিলারাও একই রকম অভিযোগে অভিযুক্ত হন। জেলের ভিতরেই তাঁদের সন্তান জন্ম নেয়। এ বছর হেরাতে জন্ম নিয়েছে এমনই দশটি শিশু। গরাদের পিছনে বেড়ে উঠছে তাদের সত্তর জন অগ্রজ, অগ্রজা। লাভের লাভ একটাই। এই ধরনের কয়েদিদের ইংরেজি এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত রয়েছে হেরাতে। তা ছাড়া, অন্যান্য শিক্ষামূলক কর্মসূচিও রয়েছে। রয়েছে কার্পেট বোনার মতো হাতের কাজ শেখানোর বন্দোবস্তও। খেলাধূলা এবং অন্যান্য কাজকর্মেও উত্সাহ দেওয়া হয় কয়েদিদের।
এখানে কয়েদিদের জন্য ভাল বন্দোবস্ত রয়েছে। থাকার পরিবেশও ভাল। শুধু তাঁরা বাইরে যেতে পারেন না। মানবাধিকার আইনের ভিত্তিতে আমরা তাঁদের পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করেছি। এখানে ভাল খাবারদাবার এবং পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা আছে।
কিন্তু দিন দিন আশঙ্কা বাড়ছে। আগামী বছরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে প্রায় সমস্ত বিদেশি সেনার চলে যাওয়ার কথা। ফলে এরই মধ্যে পশ্চিমী অনুদানে ভাটার টান লক্ষ করা যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে হেরাতের মতো জেলগুলিতেও। এখানকার মহিলা কয়েদিদের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারেরও তেমন আগ্রহ নেই। কারণ, এখন নতুন করে বাড়তে থাকা তালিবানি সন্ত্রাস দমনে বেশি নজর দিতে হচ্ছে কাবুলকে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তিতে সই করতে অস্বীকার করে ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের কোপে পড়েছেন হামিদ কারজাই। ফলে মার্কিন অনুদান আসার সম্ভাবনাও এই মুহূর্তে অনেকটাই স্তিমিত।
First Published: Friday, December 20, 2013, 10:47