Last Updated: April 15, 2014 20:33
পাঁচতলা বহুতল। একবালপুরের মতো জনবহুল এলাকা। সেখানে কিভাবে দিনে-দুপুরে খুন হয়ে গেলেন মা পুষ্পা সিং এবং তাঁর দুই মেয়ে। টের পেলেন না পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন?কীভাবেই বা ট্রাঙ্কে ভরে পাচার হয়ে গেল দেহ ? মাটিতে পুঁতে দেওয়ার আগে মেঝেতে গর্ত খোঁড়ার সময় টের পাননি বাসিন্দারা ? কীভাবে আগাম ছক কষে সবকিছু করা হয়েছিল তা জেরায় স্বীকার করেছে আততায়ীরা। আর সেই ঘটনাই উঠে এসেছে চব্বিশ ঘণ্টার অন্তর্তদন্তে।
২৯ মার্চ দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটে।
ইলেকট্রিশিয়ানের পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকল চার আততায়ী। প্রথমেই দুই দুষ্কৃতী মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে খুন আরাধনাকে। ততক্ষণে প্রদীপ্তিকে ধরে ফেলেছে বাকি দুজন। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। প্রাণ বাঁচাতে সিকান্দারের হাতুড়ি ধরা হাতে কামড়ও দেয় প্রদীপ্তি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে ও শ্বাসরোধ করে আততায়ীরা খুন করে প্রদীপ্তিকেও। এরপর তারা অপেক্ষা করতে থাকে মা পুষ্পা সিংয়ের জন্য। পনেরো মিনিটের মধ্যে ফ্ল্যাটে পৌছন পুষ্পা সিং। আততায়ীরা দরজা খুলে তাকে ফ্ল্যাটে ঢুকিয়ে নেয়। এরপর একই কায়দায় মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় পুষ্পাকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, তিনটি হত্যার ঘটনায় মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মারে সিকান্দার নিজে।
শনিবার বেলা আড়াইটে থেকে সাড়ে তিনটে।
চার আততায়ী ঘর থেকে মুছে ফেলে রক্তের দাগ । দুজন অপেক্ষা করতে থাকে ফ্ল্যাটের মধ্যেই। বাকিরা বেরিয়ে যায় নিঃশব্দে।
শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা।
দুই আততায়ী খিদিরপুর থেকে দুটি ট্রাঙ্ক এবং পলিথিন কিনে ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। এরপর চারজনে মিল দেহগুলি পলিথিনে মুড়ে ট্রাঙ্কে ঢোকায়। গোটা ফ্ল্যাট সাজিয়েগুছিয়ে ফেলে তারা। এরপর ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে বেরিয়ে যায় চারজনেই।
শনিবার রাত দশটা
চার আততায়ী মিলে সিকান্দারের দোকানের মেঝে খোঁড়া শুরু করে। শব্দ পেয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের সিকান্দার জানায় , দোকানেই জলাধার তৈরির জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। সারারাত ধরে চলে খোঁড়াখুঁড়ি।
রবিবার ভোর পাঁচটা
চারজনেই ফিরে যায় ফ্ল্যাটে। ট্রাঙ্কে ভরা দেহগুলি নামিয়ে নিয়ে আসা হয় সিকান্দারের দোকানে। গর্তের মধ্যে রেখে দেহগুলিতে প্রথমে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এরপর স্টোনচিপ ও ইট দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়। রবিবারই বেলা আটটা নাগাদ রাজমিস্ত্রি ডেকে বাঁধিয়ে ফেলা হয় পুরো মেঝে। বাঁধানো মেঝের ওপর আঠা দিয়ে আটকে দেওয়া হয় ফ্লোর ম্যাট। রাতভর জেরায় পুলিসের কাছে একথা স্বীকার করেছে দুই আততায়ী। আততায়ীদের স্বীকারোক্তি খতিয়ে দেখতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে পুলিস।
First Published: Tuesday, April 15, 2014, 20:33