Last Updated: April 10, 2012 18:52

মঙ্গলবার স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স-এর সমর সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল দলবীর সিংয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন সেনাপ্রধান বিজয়কুমার সিং। আর কাকতালীয়ভাবে এদিনই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এল ভারতীয় প্রতিরক্ষা ইতিহাসের বৃহত্তম (আর্থিক অঙ্কে) চুক্তি ঘিরে অনিয়মের প্রসঙ্গ। একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য ফরাসী যুদ্ধবিমান `র্যাফেল`-এর নির্বাচন নিয়ে তুলে দিল নানা প্রশ্ন।
৫ বছরের টানটান লড়াইয়ের পর গত জানুয়ারিতে ৫ প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে `র্যাফেল`। ফরাসি বিমান নির্মাতা সংস্থা ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন-এর তৈরি এই পঞ্চম প্রজন্মের মাল্টি রোল ফাইটার জেট`কে ভারতীয় বায়ুসেনার অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। আশির দশকে ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন-এর তৈরি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান কিনেছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। এখনও ভারতীয় বায়ুসেনায় সমর সম্ভারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মিরাজ-২০০০। মিরাজের সেই `পারফরম্যান্স` প্রতিযোগিতার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে দেয় র্যাফেল`কে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ফরাসী যুদ্ধ বিমান নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে স্থির হয় ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন-এর থেকে ১২৬টি যুদ্ধবিমান কিনবে ভারতীয় বিমানবাহিনী। প্রথম দফায় আগামী ৩৬ মাসের মধ্যে ১৮টি র্যাফেল বিমান ভারতে রফতানি করবে ড্যাসল্ট গোষ্ঠী। বাকি বিমানগুলি ভারতীয় সংস্থা হ্যাল-এর সঙ্গে যৌথ কারিগরী উদ্যোগে বেঙ্গালুরুতে তৈরি হবে। কিন্তু এবার সেই চুক্তি নিয়েই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অন্দরমহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে বলে খবর মিলেছে।

প্রধান `প্রতিদ্বন্দ্বী` ইউরোফাইটার টাইফুন-এর তুলনায় র্যাফেল কিনতে মোট ১০,০০০ কোটি টাকা কম খরচ হবে বলে দাবি করা হলেও কার্যক্ষেত্রে এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেনি এ কে অ্যান্টনির মন্ত্রক। প্রাথমিকভাবে ১২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার `ডিল` ৮০,০০০ কোটি টাকার বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে এই `অঙ্ক` অনেক বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া, প্রথম দফায় `উড়ান`-এর জন্য তৈরি অবস্থায় যে ১৮টি মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট পাঠানো হবে তার `প্রকৃত মূল্য`রও কোনও উল্লেখ নেই চুক্তিপত্রে।
প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে সত্তরের দশকের মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের পরিবর্তে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান ফাইটার জেট হিসেবে ১২৬টি পঞ্চম প্রজন্মের মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে বরাত পাওয়ার দৌড়ে ছিল ৬টি যুদ্ধবিমান। দুই মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা লকহিড মার্টিনের এফ-১৬ আইএন ফাইটিং ফ্যালকন এবং বোয়িং-এর এফ/এ-১৮ ই/এফ সুপার ফ্যালকন-এর পাশাপাশি রাশিয়ার মিগ কর্পোরেশন নির্মীত মিগ-৩৫, সুইডেনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা সংস্থা `সাব`-এর তৈরি গ্রিপেন এবং জার্মান, ব্রিটেন, স্পেন ও ইতালির যৌথ সংস্থা `ইউরোপিয়ান কনসোর্টিয়াম`-এর ইউরোফাইটার টাইফুন- এর তরফে ২০০৭ সালে দরপত্র জমা পড়ে।

বস্তুত, যোগ্যতা পরীক্ষার লড়াইয়ে র্যাফেল`কে সবচেয়ে বড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল ইউরোফাইটার টাইফুন`ই। গত বছর জুলাই মাসে ভারত সফরে এসে ইউরোফাইটারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এর আগেই ভারতে এসে `এফ` সিরিজের বিমানের পক্ষে জোরদার লবি করতে দেখা গিয়েছিল বারাক ওবামার সফরসঙ্গী মার্কিন সরকারের কর্তাদের। কিন্তু র্যাফেল-এর প্রযুক্তিগত উত্কর্ষ, বিমান প্রতি দর, প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় এবং ড্যাসল্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতীর বায়ুসেনার পুরনো সম্পর্কের জেরে শেষ পর্যন্ত র্যাফেল-কে নির্বাচিত করা হয় বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানান হয়। কিন্তু এবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সেই দাবি ঘিরেই তৈরি হল সংশয়ের আবহ।
First Published: Tuesday, April 10, 2012, 18:52