বেরিয়ে এল ইসলামিয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য, Islamia scam

বেরিয়ে এল ইসলামিয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য

বেরিয়ে এল ইসলামিয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্যইসলামিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বড়সড় দুর্নীতি ফাঁস হল সংস্থার বার্ষিক অডিট রিপোর্টে। সংস্থাকে বিভিন্ন সময়ে দান করা ধর্মাবলম্বী মানুষজনের সম্পত্তি অপব্যবহারের অভিযোগ উঠছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের মার্চ মাসে অডিটের সময় ধরা পড়ে এধরণের একাধিক অস্বচ্ছতা। জাকাত বা দানের টাকা নয়ছয়সহ বড়সড় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এল ইসলামিয়া হাসপাতালের অডিট রিপোর্টে। রোগীদের ওষুধের টাকা, অব্যবহৃত ওষুধের হিসেব, আসবাবপত্র কেনা ইত্যাদি নানা ইস্যুতে অডিটে ধরা পড়েছে অসঙ্গতি। এই সংস্থার শীর্ষপদে রয়েছেন তৃণমূল নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদ। দুর্নীতির এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ।

অডিট সংস্থা ফারুক এন্ড ভৌমিকের এই রিপোর্টে ইসলামিয়া হাসপাতালের আয়-ব্যয়ের বিস্তর গড়মিল ধরা পড়েছে।আইসিসিইউ-র স্টক রেজিস্টারে রোগীদের অব্যবহূত ওষুধ এবং চিকিত্সা সরঞ্জামের হিসেব ঠিকমতো রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে অডিট রিপোর্টে।বিপুল পরিমান অব্যবহূত ওষুধ এবং সরঞ্জাম ঘুরপথে হাসপাতালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এই রিপোর্টে।অভিযোগ, দুর্নীতি চলছে রোগীদের চিকিত্সার টাকা নিয়েও। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে রোগীদের থেকে অগ্রিম বাবদ ৮১২২৯৬ টাকা জমা পড়ে হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু স্টোররুম থেকে রাতারাতি অসংখ্য রোগীর ডিসচার্জ ফাইল উধাও হওয়ায় রহস্য দানা বাঁধছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় চিকিত্সা খরচ বাবদ কার কাছ থেকে, কত টাকা নেওয়া হয়েছে মিলছেনা সেই হিসেবও। চলতি বছরে ছ লাখ একত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে দুটি বেসরকারি সংস্থা থেকে আসবাবপত্র কেনে ইসলামিয়া হাসপাতাল। অডিটরকে যার কোনও নথি দেখাতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত আর্থিক নথিপত্রও ভুলে ভরা।

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-র পাশাপাশি পার্ক সার্কাসেও একটি শাখা রয়েছে ইসলামিয়া হাসপাতালের। সংস্থার নিয়ম অনুযায়ি, এই শাখায় কেবলমাত্র আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের রোগীদের চিকিত্সা হবে। এই হাসপাতালের লাভের টাকা খরচ করা হবে ইসলামিয়া হাসপাতালের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যু শাখায়, দুঃস্থ রোগীদের চিকিত্সায়। অডিট রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র পার্ক সার্কাস শাখাতেই ঘাটতির পরিমান প্রায় আট লক্ষ টাকা। কীভাবে এই ঘাটতি হল তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।

কর্তৃপক্ষ ক্যামেরার সামনে অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাস্তব বলছে অন্য কথা। অডিট রিপোর্টে সংস্থার ব্যালান্স শিটে প্রায় বারো লক্ষ টাকা কারচুপির অভিযোগ উঠে আসার পর তদন্ত কমিটি গড়েছিল ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ। গত আঠারোই মে বউবাজার থানায় একটি এফআইআরও দায়ের করা হয়। সেই তদন্ত এখনও চলছে। এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ডের নিয়মকানুনকেও কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন, ইসলামিয়া হাসপাতালের পদাধিকারিরা। অনুদানের টাকা জমা নেওয়ার জন্য খোলা হয়নি কোনও পৃথক জাকাত অ্যাকাউন্ট। যার জেরে সংস্থার সার্বিক আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছর ধরে সংস্থার সেক্রেটারি পদে রয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ। পাহাড় প্রমান এই দুর্ণীতি প্রকাশ্যে আসায় প্রশ্ন উঠছে সংস্থার পদাধিকারীদের ভূমিকা নিয়েও। ফআইআরও দায়ের করা হয়। সেই তদন্ত এখনও চলছে।
 
এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল-বোর্ডের নিয়মকানুনকেও কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন, ইসলামিয়া হাসপাতালের পদাধিকারিরা। অনুদানের টাকা জমা নেওয়ার জন্য  খোলা হয়নি কোনও পৃথক জাকাত অ্যাকাউন্ট। যার জেরে সংস্থার সার্বিক আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। দীর্ঘ
প্রায় পনেরো বছর ধরে সংস্থার সেক্রেটারি পদে রয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ। পাহাড় প্রমান এই দুর্ণীতি প্রকাশ্যে আসায় প্রশ্ন
উঠছে সংস্থার পদাধিকারীদের ভূমিকা নিয়েও।

৩৩ নম্বর মৌলনা সৌকত আলি স্ট্রিটের এই বাড়ির ভাড়ার টাকা বকেয়া রয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ।ইনস্টিটিউটের খাতায় মহম্মদ মুশা ভাড়াটে হলেও বাস্তবে তিনি ওই বাড়িতে থাকেন না।অন্য এক ব্যবসায়ী সংস্থাকে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন। তবে মহম্মদ মুশা মাঝে মাঝে ভাড়ার টাকা মিটিয়ে দেন বলে দাবি করেছেন। তবে ভাড়ার সেই রসিদ অডিটারকে দেখাতে পারেননি ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ।

১১ নম্বর কিড স্ট্রিট। ভাড়াটে হরে সিং পাথেজা ও সুগুপ্তা আহমেদ। হরে সিং পাথেজা বহু দিন আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবার থাকে টালিগঞ্জে। আর পাথেজার ভাড়ার অংশে ২৫-৩০ বছর ধরে রমরমিয়ে চলছে হোটেল নীলম। অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী এই বাড়ি ভাড়া বাকি রয়েছে সাত লক্ষ বাইশ হাজার চারশো টাকা। বাড়ির অন্য ভাড়াটে সুগুপ্তা আহমেদ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ইনসটিটিউটের সেক্রেটারি সুলতান আহমেদের আত্মীয়া। সেই সুবাদেই মাসিক মাত্র হাজার টাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভাড়া থাকেন তিনি।

৪৭ ফিয়ার্স লেন। অডিট রিপোর্টে সাত জন ভাড়াটের নামের উল্লেখ রয়েছে। তবে তাঁরা কয়েক যুগ ধরে ভাড়া দেন না। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটেদের প্রশ্ণ করতেই বেড়িয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁরা জানেনই না বাড়িটি ইসলামিয়ার সম্পত্তি। তাঁরা জানেন জহুরা বিবির সম্পত্তি। তিনি দীর্ঘদিন আগে মারা গেছেন। তাঁর বংশধরেরাই নিয়মিত ভাড়া নেন।

৭ বাই ১ গ্যাস স্ট্রিট। ইসলামিয়ার হিসাবে বাড়ির ভাড়াটে মহম্মদ সুলেমান। ভাড়া বাকি উনসত্তর হাজার চারশো সাতানব্বই টাকা। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সুলেমান নামে কাউকে চেনেনই না বাড়ির বাসিন্দারা। ইসলামিয়া ইনসটিটিউটের ২০১০-১১ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী বিভিন্ন সম্পত্তির ভাড়া বাবদ বকেয়া ১৬ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩১২ টাকা। তারমধ্যে ইনসটিটিউট পেয়েছে মাত্র ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬১২ টাকা। যারা ভাড়া দেননি তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা যেমন নেওয়া হয়নি। তেমনি অনেকক্ষেত্রে ভাড়া বা নেওয়ারপর রসিদ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামিয়া ইনসটিটিউটের বকেয়া করের পরিমাণ এক কোটি তেত্রিশ লক্ষ আশি হাজার নশো
তিন টাকা।

অডিট রিপোর্ট প্রকাশ্যে চলে আসায় চরম অস্বস্তিতে ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ। তবে ক্যামারের সামনে সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে ইনসটিটিউট কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করলেও সংস্থায় এমন সব সম্পত্তির দলিল পাওয়া গেছে, যেগুলির বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই।

First Published: Tuesday, November 15, 2011, 20:58


comments powered by Disqus