Last Updated: December 21, 2013 12:32

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে মালদার কালিয়াচক থানার মহব্বতপুর। জাল নোট কারবারে সারা দেশে এই গ্রামেরই কমকরে ১০০ জন জেলবন্দি। পুলিসের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকে। অথচ গ্রামের ভোটার মাত্র ২ হাজার। ধনের খোঁজে প্রায় প্রতিদিনই জাল নোটের জালে জড়ায় গ্রামের পুরুষরা। আর মেয়েরা--ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখার শেষে দিন কাটান চরম দুর্দশায়।
আর আগল নেই। ভুখা পেটের টানে কপাট বিকিয়েছে মহাজনের ঘরে। বাইরের জনের সামনে যাঁরা এতদিন কাপড় দিতেন মাথায়, এখন কোমরে কাপড় বেঁধে বিড়ি বাঁধেন। জাল নোটের জালিয়াতিতে ঘরের মানুষ জেলে। এখন, বিড়ি-ই ভাত দেয় মহব্বতপুরে।
অভাব ছিল না আগে এমনটা নয়, অভাব ছিল। ভালো রকমেরই ছিল। তবে সেই অভাবে শান্তি ছিল, সম্মান ছিল। কিন্তু অভাবটাও যে ছিল। সেই অভাবই ভাসিয়েছে মান। দাদন খাটা মহব্বতপুরে এখন আঠারোও পেরোতে হয় না। রাষ্ট্রদোহী খোঁজে পুলিস। পেয়েও যায়। আইনতো আর অভাবের খিদে দিয়ে অপরাধ বিচার করে না। ঘরের খিধে মেটাতে--ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া মহব্বতপুরের যুবকরা জালে পড়ে জাল টাকার। জলে পড়ে পরিবারের লোকেরা। কিন্তু আইন আদালত। তার জন্যও তো পয়সা লাগে।
মামলা বড় জটিল, রাষ্ট্রদ্রোহ। তাই সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসে না। সুযোগ নেয় জালিয়াতরা। আবার সেই চোরা ফাঁদ। আড়কাঠির ফাঁদে পরে ফের ভিনরাজ্য। সীমান্ত পেরানো টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার সেই একই হিসেব নিকেষ। খেতে না পাওয়া ঘরে মাসের শেষে পাকা দালানের স্বপ্ন।
যে গ্রামের সব থেকে কাছের বাস স্টপেজ দশ কিলোমিটার দূরে। সেই গ্রাম মহব্বতপুরের বাসিন্দাদের অনেকেই সুদূর হায়দরাবাদ, মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা সমেত দেশের বড়বড় শহরের বড়বড় জেলে বন্দি। গ্রামের বাসিন্দাদের খবর জানে দু-পা এগোলেই বাংলাদেশের জাল নোটের কারবারিরা। সীমান্ত হয়ে ঢোকা টাকায় ধংস হয়ে যাচ্ছে গ্রাম। ধনী হওয়ার স্বপ্নে নিজেদের দেশের ক্ষতি যাঁরা করছেন তাদের পরিবার তলিয়ে যাচ্ছে আরও অগাধ জলে। কিন্তু বুঝছেন না তারা। ফলে জাল নোট চক্রের পরম্পরা চলছে চলবেও।
First Published: Saturday, December 21, 2013, 12:32