কঠিন সংগ্রাম পেরিয়ে ইতিহাস মেরির

কঠিন সংগ্রাম পেরিয়ে ইতিহাস মেরির

কঠিন সংগ্রাম পেরিয়ে ইতিহাস মেরিরমণিপুরের অখ্যাত গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল যে যাত্রা, তা আজ পূর্ণতা পেল। সোনাজয়ের লক্ষ্যে পেরোতে পারলেন না ঠিকই, কিন্তু অলিম্পিকের ইতিহাসে সোনার অক্ষরেই লেখা থাকবে মেরি কমের নাম। অলিম্পিকের প্রথম মহিলাদের বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জিতলেন তিনি।

বাবা-মা ঝুম চাষি। অক্ষরজ্ঞান তো দূরের কথা, উপজাতির প্রচলিত ভাষার বাইরে কথা বলার ক্ষমতাই তৈরি হয়নি তাঁদের কখনও। প্রতিকুল জলবায়ুর সঙ্গে প্রতিদিন পাঞ্জা লড়ে করতে হত অন্নের সংস্থান। বোধহয় তার থেকেই এই হার না মানা মানসিকতার জন্ম। বেঁচে থাকার অবলম্বন বলতে দুটি হাত। তাই সেই হাতগুলি অতি ছোটো বয়স থেকেই বলিষ্ঠ হয়ে উঠল সমস্ত প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে। অতি ছোটো বয়সেই ইভটিজারদের যম হয়ে উঠেছিলেন মেরি কম। আজও তাঁর শাসনের সাক্ষ বহন করে এলাকার বহু অভব্য ছেলের মুখের ক্ষতচিহ্ন। পরে সেই দুর্দম শক্তিই হল সঙ্ঘবদ্ধ। রাজ্যের ডোঙ্গো সিংয়ের এশিয়ান গেমস সাফল্যে উদ্বুদ্ধ মেরি কম ঠিক করলেন বক্সিং শিখবেন।

কঠিন সংগ্রাম পেরিয়ে ইতিহাস মেরির

বাড়িতে না জানিয়েই শুরু হল অনুশীলন। বাবা-মা চাননি। আবার জানার পর বাধাও দেননি। রাজ্যস্তরে মেয়ের সাফল্যের খবর খবরের কাগজে দেখে প্রথমে জানতে পারেন বাবা। তারপর নিজেই উদ্যোগী হন মেয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়। বক্সিংয়ের খরচ জোগাতে বিক্রি করতে হয়েছে প্রচুর সম্পত্তি। ত্যাগ করতে হয়েছে বহু শখ আহ্লাদ। সেই বলিদান বিফলে যায়নি। মহিলাদের বক্সিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন মেরি কম। ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৬ বারই পদক জেতার বিরল কৃতিত্বও তাঁর দখলে। ধীরে ধীরে প্রায় অপরাজেয় হয়ে উঠেছেন ভারতীয় বক্সিংয়ের গর্ব মেরি কম। মেরির নিজের ভাষায়, তাঁর সাফল্যের রসায়ন লুকিয়ে আছে ছোটোবেলার সংঘর্ষের দিনগুলিতেই। স্কুলে যাওয়ার পথে অভব্য ছেলেদের সঙ্গে সংঘর্ষ বা অনুশীলনের দিনগুলিতে ছেলেদের সঙ্গে প্র্যাকটিস তাঁকে করেছে ক্ষিপ্র, তীব্র আরও শক্তিশালী। বক্সিংয়ের পাশেই একনাগারে বয়ে গিয়েছে মেরি কমের জীবনের অন্যান্য ধারাগুলি। কে ওনলার কমকে বিয়ে করেছেন মেরি কম। পাঁচ বছর বয়সের যমজ সন্তানের মা তিনি।

কিন্তু, কৈশোর থেকে পরিপূর্ণ নারীত্বে উপনীত হয়েও একটি বিষয়ে মেরি রয়ে গিয়েছেন অপরিবর্তিতই। আজও মহিলা বক্সিংয়ে গোটা দেশে তাঁর বিকল্প নেই। আজও ক্রীড়া দুনিয়ার সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় দেশের সেরা বাজি তিনিই। মেরি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ শুধু তাঁর ক্রীড়াজীবনকেই পূর্ণতা দিল না, দেশের বাকি মেয়েদের ক্ষেত্রেও তা হয়ে উঠল উদাহরণ স্বরূপ। কন্যাভ্রুণ হত্যা, বধূ নির্যাতন থেকে শ্লীলতাহানি এমনকী ধর্ষণ। হয়তো সবকিছুর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদের প্রতীক হবে ম্যারি কমের বজ্রমুষ্ঠি। মণিপুরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সেনা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনশন চালানো ইরম শর্মিলা চানু বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন ভূলুণ্ঠিত হওয়া নারীত্ব। সংগ্রামী হাজারো মানুষের প্রতিনিধি হয়ে আজ ব্রোঞ্জ জিতলেন মেরি কম। হাতিয়ার দুটি গ্লাভস।  
 





First Published: Wednesday, August 8, 2012, 19:42


comments powered by Disqus