Last Updated: December 12, 2013 22:41

সম্পত্তির লোভেই খুন করা হয়েছে শঙ্কর প্রসাদ রায়কে। গতকালই পাটুলির কেন্দুয়া মেইন রোডে তাঁর বাড়ির দোতলার রান্নাঘরের দেওয়াল খুঁড়ে মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিস। সম্প্রতি অশক্ত বৃদ্ধ খুন হয়েছেন কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে। গড়িয়াহাটে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা খুনের ঘটনা অমিল নয় কলকাতার বাইরে রাজ্যের অন্যান্য বর্ধিষ্ণু শহরেও। কিন্তু কেন বাড়ছে এই প্রবণতা? উত্তর খুঁজতে সমাজতত্ত্ববিদ ও মনোবিদের সঙ্গে কথা বলেছেন ২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি সৌরভ গুহ।
বাঁশবাগানের মাথার ওপর ওঠা চাঁদ, কাজলা দিদিকে মনে করাত। কিন্তু নগরায়াণের বেনোজলে ডুবেছে সেই আদিম চাঁদ। এখানেই ইতি নয়। একে তো চাঁদের দেখাই মিলছে না, তার উপর আবার চাঁদ দেখতে গিয়ে অন্য কাউকে দেখে ফেলার মুশকিলটাও আছে। ফেসবুক, উইচ্যাট মুছে দিচ্ছে সম্পর্কের নৈকট্য। দূরকে কাছে পেতে গিয়ে ক্রমশ হারাচ্ছে নিকট। সেই বিচ্ছন্নতা ক্রমশ অসহায় করে তুলছে অশক্ত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের। তারই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। অন্তত সমজতত্ববিদদের বিশ্লেষণ তেমনই। মহানগরী ও অন্যন্য শহরে একের পর এক বৃদ্ধ বৃদ্ধার খুনের কারণ খুঁজতে গিয়ে মনোবিদ, সমাজতত্ত্ববিদরা বলছেন,
প্রথমত, নতুন নতুন জায়গায় ফ্ল্যাট, হাউসিং কমপ্লেক্স হচ্ছে। সেখানে যাঁরা বসত করছেন, তাঁদের বেশির ভাগের সঙ্গেই এলাকার শিকড়ের যোগ নেই। পরিচিতির আগলে রাখা আগল নেই সেখানে। পুরনো শিকড়ের সঙ্গেও যোগটা কেটে গেছে।
দ্বিতীয়ত, সম্পর্ক ভাঙছে, যৌথ পরিবার ভাঙছে, পরিচিত মুখগুলোর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ব্যক্তিমানুষ। কিন্তু কোনও বিকল্প গড়ে উঠছে না। সম্পর্কের বন্ধন হারা জীবন একা করে দিচ্ছে।
তৃতীয়ত, পরিবারের নির্ভরতা কমছে, মানুষ বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, বাড়তি দায়িত্ব নিতে চাইছেন না কেউই। একাকীত্ব আরও বাড়ছে। ঘটনা প্রবাহ দেখে মনস্তত্ত্ববিদরা মনে করছেন, এটা একটা রোগ। আর্বান লাইফ স্টাইল ডিজ অর্ডার ডিজিজ। শুধু প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে ছুটতে ছুটতেই নয়, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে থাকতে থাকতেও মানুষ জেনিটিকালি একা হয়ে যাচ্ছে।
সেই একাকীত্বের সবচেয়ে বড় শিকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। অসহায়। নগরায়ণের রাক্ষুসে খিদে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রমোটিং চক্রের সফট্ টার্গেট হচ্ছেন তাঁরাই। ভোগের দুনিয়ায় সম্পত্তির দখল নিতে কোপটাও পড়ছে তাঁদের ঘাড়েই।
First Published: Thursday, December 12, 2013, 22:41