ধর্ষণ সমাজের লজ্জা, ধর্ষিতার নয়: সুজেট

ধর্ষণ সমাজের লজ্জা, ধর্ষিতার নয়: সুজেট

ধর্ষণ সমাজের লজ্জা, ধর্ষিতার নয়: সুজেটধর্ষণ সমাজের লজ্জা, ধর্ষিতার নয়। আমার মুখটা দয়া করে ঝাপসা করবেন না। পার্ক স্ট্রিটে নির্যাতিতা মহিলার এমন সাহসী সিদ্ধান্তই বিপ্লব আনল।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে ঝলমলে শৃঙ্গ জয়। সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে আত্মপ্রকাশ করলেন পার্ক স্ট্রিটের নির্যাতিতা। নিজের নাম ঘোষণা করে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ধর্ষিতা নন, ধর্ষণকারীরাই সমাজের লজ্জা। এক বছর আগেও হতাশার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিল যে জীবন, সেখান থেকে এ যেন রূপকথার পুনরুত্থান।

এ যেন কুয়াশার চাদর ভেদ করে ঝলমলে সূর্যোদয়। এতদিন সুজেটের ঝাপসা, ঘষা, ঘষা ছবি দেথতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা। অস্পষ্ট এক অবয়ব, যার শুধু আউট লাইনটুকুই বোঝা যায়। 

কিন্তু কুয়াশার চাদর সরে গেল মঙ্গলবার।

যে পার্কস্ট্রিট চরম বিপর্য়ের দিকে তাঁকে ঠেলে দিয়েছিল, মঙ্গলবার সেই গ্রাউন্ড জিরো থেকেই শুরু হল নতুন আত্ম নির্মাণ। বলা ভাল, এক নতুন লড়াই।
 
সাধারণ মানুষের অসাধারণ লড়াইয়ের কথা আমাদের প্রেরণা জোগায়। দুহাজার বারোর পাঁচই ফেব্রুয়ারি সুজেটকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার পর তিনি এতটাই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, যে থানায় যাওয়ার কথাও ভাবেননি। আত্মীয়ের পরামর্শে অভিযোগ যখন জানাতে গেলেন, ততক্ষণে তিনদিন পেরিয়ে গিয়েছে। পানশালা থেকে বেরিয়ে গাড়ির ভিতর ধর্ষণ। তাই চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দুই পুলিস অফিসার।

এরপর আরও বড় আঘাত। সবচেয়ে বড়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী পার্কস্ট্রিটের ঘটনাকে সাজানো ঘটনা বললেন। তারপর থেকে ধেয়ে এসেছে একের পর এক বাক্যবাণ। ধর্ষণ যে হয়েছে, তা বলেছিলেন একজন। এমনকি কারা এই কাজ করেছে তাও সামনে এনে দিয়েছিলেন তিনি।  
 
ব্যস। তারপরে ইনিও যুগ্ম কমিশনার অপরাধ থেকে বদলি হয়ে গেলেন বারাকপুরে ডিআইজি ট্রেনিং পদে। দময়ন্তী সেনের বদলির পর থেকেই অথৈ জলে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্ত। ঘটনার পর একবছর পেরিয়ে গেলেও মূল অভিযুক্ত এখনও ফেরার।

মন্দ মেয়ের তকমা। আশপাশের লোকেদের ভুরু কোঁচকানো দৃষ্টি। লজ্জা, ভয়, আতঙ্ক আর সঙ্কোচ। সব মিলিয়ে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। চাকরি খুইয়ে আর্থিক অভাব সেই সঙ্কটকে আরও তীব্র করে। কিন্তু দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মা লড়াই ছাড়েনি। সম্প্রতি একটি চাকরিতেও যোগ দিয়েছেন সুজেট। তাও আবার নারী কল্যাণের কাজে। সুজেট জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য নির্যাতিতাদের সমস্যা উপলব্ধি করতে চান তিনি।

তবু তাঁকে ঘিরে ঝাপসা চাদরটুকু ছিল। কিন্তু তা সরিয়ে দিল একটি মৃত্যু। কামদুনির পরিত্যক্ত জমি লাগোয়া খালের ধারে কুড়ি বছরের এক তরুণীর দেহ উথালপাথাল করে দিল সুজেটের দুনিয়া।

কামদুনি,গাইঘাটা, গেদে, সব ক্ষোভে ফুটছে। আর পারলেন না সুজেট। গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন আত্মদীপ ভব। সুজেটও সেটাই করলেন। নিজেই নিজের প্রদীপ হলেন।
 
 অন্তরালবর্তিনী থেকে আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠার কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পোড়া বাংলায় মেয়েদের সম্মান আজ ধুলোয়। তাই সুজেট নিজেই নিজের ঝাপসা বর্ম ছিন্ন করলেন। এখন তিনি এক অনির্বাণ দীপশিখা।







First Published: Wednesday, June 19, 2013, 17:51


comments powered by Disqus