Last Updated: June 25, 2014 23:32

পুজোর পর আলুর দর সেই যে উর্ধমুখী হল, নামার আর লক্ষণ নেই। বাজারে এখন জ্যোতি আলু কুড়ি টাকা ছুইছুই। আলু কেন লাগামছাড়া হয়ে গেল ? এবছর সঙ্কট তৈরি হয়েছে গোড়াতেই। মাঠ থেকেই আলুর একটি বড় অংশ চলে গিয়েছে ভিন রাজ্যের হিমঘরে।
রাজ্যের গড় আলু উত্পাদন ৯০ থেকে ৯৫ মেট্রিক লক্ষ টন। গোটা বছরে রাজ্যে চাহিদা প্রায় ৬০ মেট্রিক টন আলু। অর্থাত্, উত্পাদন এবং চাহিদার মধ্যে ফারাক থাকছে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। ব্যবসার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় উত্পাদন যেহেতু বেশি আলুর দর অবশ্যই কম থাকা উচিত। কিন্তু তা এবার হয়নি। কারণ হিসাবে উঠে আসছে এবছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দু-দফার বৃষ্টিতে নাবি ধসায় ক্ষতি হয়েছে জেলার আলু চাষ। নাবি ধসায় আলু পরিণত হওয়ার সুযোগ পায়নি। আলু পরিণত হতে কমপক্ষে ৪৮ দিন সময় লাগে। এবছর সময় মিলেছে মাত্র ২২ থেকে ২৫ দিন। ফলে আলুর আকার যথেষ্ট ছোট হয়েছে। অর্থাত্, গোড়াতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। হুগলিতে ২০১২-১৩ আলু হয়েছিল ২৭ লক্ষ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৩-১৪তে আলুর উত্পাদন মাত্র ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন। কিন্তু, এর থেকেও বড় সমস্যা অন্যত্র।
গত বছর আলুর দর ঠিক রাখতে সরকার বাইরের রাজ্যে আলু রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পুলিসি তত্পরতাও ছিল তুঙ্গে। এবার তা বুমেরাং হয়ে দাড়িয়েছে। এবার কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে রাজ্যের হিমঘরে মজুত না করে ভিন রাজ্যে আলু মজুত করছেন ব্যবসায়ীরা। আলু মজুত হয়েছে অসম, বিহারের হিমঘরে । বৃষ্টির কারণে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে আলু চাষে মার খেয়েছে। চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই মাঠ থেকে কিনে নিয়েছেন আলু। এতো গেল ভিন রাজ্যের কথা। সমস্যা রয়েছে এরাজ্যেও। মাঠেই আলু বিকিয়েছে চারশ টাকা বস্তা দরে। অর্থাত্ প্রতি কেজির দর হচ্ছে আট টাকা। হিমঘর খরচা বস্তা প্রতি একশ ষাট টাকা। অর্থাত্ পঞ্চাশ কেজি বস্তার ক্রয়মূল্যই পাঁচশ ষাট টাকা। হিমঘর থেকে আলু বার করার সময় বস্তায় চার কেজি করে কমে যায়। অর্থাত্ বাজারে যাওয়ার আগেই আলুর দর কেজিতে প্রায় তেরো টাকা হয়ে যাচ্ছে। এরপর বাজারে আলু পাঠানোর আগে বাদ পড়ে কেজি খানেক আলু। অর্থাত রাজ্যের চারশ চৌত্রিশটি হিমঘরে যতই আলু মজুত থাকুক সরকার ব্যবস্থা না নিলে, আলুর নাগাল পেতে হিমসিম খেতে হবে সাধারণ মানুষকে।
First Published: Wednesday, June 25, 2014, 23:32