Last Updated: October 20, 2011 21:32

বাড়ির আপত্তি ছিল, পাশে ছিলেন শুধু বড়দা। সব আপত্তি উপেক্ষা করে তিনি কৈশোর বয়সেই মনস্থির করে ফেলেন, রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দেবেন। মানবসেবায় উত্সর্গ করবেন নিজের জীবন। ১৯৫১ সালে মঠে যোগদান করেন স্বামী প্রমেয়ানন্দ। ৬০ বছর পর বৃহস্পতিবার শেষ হল সেই মহাজীবনের পথ চলা।
স্বামী প্রমেয়ানন্দর জন্ম ১৯৩৩ সালে বাংলাদেশের শ্রীহট্টে। দেশভাগের পর তাঁর পরিবার চলে আসে নদীয়ার করিমগঞ্জে। কৈশোরেই তিনি রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হন। মনস্থির করেন, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে যোগ দিয়ে মানবসেবায় উত্সর্গ করবেন নিজের জীবন। বাড়ির লোকেরা প্রথাগত উচ্চশিক্ষার জগতে প্রবেশ করার কথা বললে আপত্তি জানান স্বামী প্রমেয়ানন্দ। সেইসময়, শুধুমাত্র পাশে ছিলেন তাঁর বড়দা। ১৯৫১ সালে স্বামী শঙ্করানন্দর অনুপ্রেরণায় মাত্র ১৮ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে করিমগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দেন তিনি। দশ বছর পর ১৯৬১ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বহু গুরুদায়িত্ব সামলেছেন স্বামী প্রমেয়ানন্দ। ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দশম সভাপতি স্বামী বীরেশ্বরানন্দর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত উদ্বোধন পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন স্বামী প্রমেয়ানন্দ। ১৯৮৭ সালে রামকৃষ্ণ মঠের ট্রাস্টি ও রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য হন । ১৯৮৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার। ১৯৯৭ এপ্রিল থেকে ২০০৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৯ ফেব্রুয়ারিতেই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন স্বামী প্রমেয়ানন্দ। অর্ধশতাব্দীর সন্ন্যাস জীবনে দেশে-বিদেশে ঠাকুর রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারা প্রচারে নিজেকে ব্যপ্ত রেখেছিলেন তিনি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তাঁর সহকর্মীদের কাছে জীবনভর অফুরন্ত ভালবাসা, শ্রদ্ধা পেয়েছেন স্বামী প্রমেয়ানন্দ। জগতের নিয়মে মৃত্যু তাঁকে ছিনিয়ে নিলেও রয়ে গেল তাঁর জীবনাদর্শ। অগণিত ভক্তদের চোখের জলে ভাসিয়ে ৭৯ বছর বয়সে রামকৃষ্ণলোকে যাত্রা করলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহাধ্যক্ষ, দীক্ষাগুরু এই স্বভাবনম্র মানুষটি।
First Published: Friday, October 21, 2011, 08:38