Last Updated: March 24, 2012 09:46

ইতালীয় পর্যটকের মুক্তির শর্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই এবার ওড়িশায় এক বিধায়ককে অপহরণ করল মাওবাদীরা। শুক্রবার রাতে কোরাপুট জেলার লক্ষ্মীপুরের বিধায়ক ঝিনা হিকাকাকে তুলে যায় গেল সশস্ত্র সিপিআই (মাওবাদী) গেরিলাদের একটি দল। জেলা পুলিসের দাবি, রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে তাঁর নিজের এলাকা লক্ষ্মীপুর এবং কোরাপুটের মাঝে পাহাড়, জঙ্গলঘেরা অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয় শাসক বিজু জনতা দলের ৩৪ বছরের এই আদিবাসী বিধায়ককে।
জেলার পুলিস সুপার সূর্যমণি প্রধান জানিয়েছেন, কোরাপুট থেকে লক্ষ্মীপুরে নিজের বাড়িতে ফেরার সময়েই টোয়াপুটের কাছে ঝিনা হিকাকার গাড়ি ঘিরে ধরে জনা পঞ্চাশেক সশস্ত্র মাওবাদী। সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী এবং গাড়ির চালককে বিনা বাধায় যেতে দেওয়া হলেও বিজেডির এই বিধায়ককে লাগোয়া জঙ্গল এলাকায় নিয়ে যায় মাওবাদীরা। নিরাপত্তাকর্মী এবং গাড়ির চালকই প্রথম লক্ষ্মীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অপহৃত বিধায়কের গাড়ির পাশে মাওবাদীদের পোস্টারের সন্ধান মিলেছে।
গতকালই হিংসা থেকে বিরত থাকতে মাওবাদীদের কাছে আবেদন করেছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। আজ এই ঘটনার পর বিধায়ককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য মাওবাদীদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন মধ্যস্থকারী বিডি শর্মা এবং দণ্ডপাণি মোহান্তি।

শুক্রবার মাওবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর মধ্যস্থতাকারী দণ্ডপাণি মোহান্তি জানিয়েছিলেন আজ অপহৃত ইতালীয় দুজন নাগরিককে মুক্তি দিতে পারে মাওবাদীরা। কিন্তু সেই ঘটনার ঠিক দশদিনের মাথায় বিধায়কের অপহরণের ঘটনায় ইতালীয় ওই দুই নাগরিকের মুক্তির বিষয়টিকে অনিশ্চিত করে তুলল। সেই সঙ্গে ফের সামনে চলে এল, সিপিআই (মাওবাদী)-র ওড়িশা রাজ্য সম্পাদক সব্যসাচী পাণ্ডার সঙ্গে সংগঠনের অন্ধ্রপ্রদেশের নেতাদের মতপার্থক্যের প্রশ্নটিও।
প্রসঙ্গত, অপহৃত দুই ইতলীয় পর্যটক অপহৃত ইতালির পর্যটক ক্ল্যানডিও কোলানজিলো এবং বোসাসকো পাওলো'র মুক্তির বিনিময়ে ওড়িশার মাওবাদী যে সমস্ত ধৃত 'কমরেড'দের মুক্তির দাবি জানিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে সব্যসাচী পাণ্ডার স্ত্রী শুভশ্রী ওরফে মিলি পাণ্ডার নাম। এই পরিস্থিতিতে আলোচনা প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে মাওবাদীদের অন্ধ্রের নেতারা বিধায়ক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখছে রাজ্য প্রশাসন ও পুলিস।
পুরো বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য শনিবার সকালেই ভুবনেশ্বরে শীর্ষস্থানীয় পুলিস ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। বৈঠক শেষে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে তাঁর দাবি, বিধায়ক অপহরণের ঘটনা ইতালীয় পর্যটকদের মুক্তি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনার উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।

বিধায়ক অপহরণের ঘটনা নিয়ে এদিন উত্তাল হয়ে ওঠে ওড়িশা বিধানসভার অধিবেশন। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই স্পিকারের হাত থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী কংগ্রেস ও বিজেপি' বিধায়করা। তুমুল হট্টগোলের জন্য মুলতুবি করে দিতে হয় অধিবেশন। এদিন নবরঙপুরের আদিবাসী নেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ মাঝি এদিন অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের সাংসদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন নবীন পট্টনায়ক সরকার। উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগেই নবরঙপুরের বিজেডি বিধায়ক জগবন্ধু মাঝিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে খুন করেছিল মাওবাদীরা।
অন্যদিকে ওড়িশার কোরাপুটের লক্ষ্মীপুরে বিধায়ক অপহরণের ঘটনায় এদিন সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ভারভারা রাও। মাওবাদী প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত অন্ধ্রপ্রদেশের এই বিশিষ্ট কবির অভিযোগ, বিভিন্ন চাপের কারণেই ওড়িশা সরকার আদিবাসীদের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ থেকে পিছিয়ে আসছেন। আর এই অনুন্নয়ন জনিত ক্ষোভ থেকেই হিংসা ও অপহরণের মতো ঘটনা বাড়ছে।
First Published: Saturday, March 24, 2012, 12:57