Last Updated: February 27, 2014 18:13

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- হাইওয়ে
রেটিং- ****
বলিউডে বিগ বাজেট ফিল্মের দৌরাত্ম্যে মাথা তুলে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, ছোট বাজেটের ছবির ক্ষেত্রে. ইমতিয়াজ আলির ছবিতে বরাবরই শুনতে পাই একটা যাত্রাপথের শব্দ. কখনও সেটা অজানা উদ্দেশে পাড়ি. কখনও তা পথ হারিয়ে অন্য পথে চলার গল্প. রোড ফিল্ম ঘরানায় সবচেয়ে প্রাণ-ছুঁয়ে-যাওয়া ছবি বানাতে পারেন যে স্বল্পসংখ্যক পরিচালক, ইমতিয়াজ তাদের মধ্যে এক নম্বরে থাকবেন. তর্কাতীতভাবে.
হাইওয়ে ছবির প্রাণভোমরা আলিয়া ভাট. সদ্য-ফোটা ফুলের মত মুখ. এই ফ্রেশনেসটা শেষ দেখা গিয়েছিল ইমতিয়াজেরই আবিষ্কার আয়েষা টাকিয়ার কাছে. সরল, নিষ্পাপ দুটো চোখ. সবসময়েই অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার আগ্রহ ফুটে উঠছে. অনবদ্য কাস্টিং তো বটেই. আলিয়ার অবিশ্বাস্য স্বাভাবিক অভিনয়. মহেশ ভাট তাঁর বাবা এবং সোনি রাজদান যে তাঁর মা, এটা যেন আর বলার অপেক্ষা রাখে না. আলিয়ার ভারহীন, নিষ্পাপ এই মুখটি যেন মনে হল, বহু বছর সিনেমার আইকন হয়ে থাকার যোগ্য.
রণদীপ হুদা. তীরের ফলার মতো চোখ. এমন একটী দৃষ্টি যা হাড়-হিম করে, অথচ নৃশংস নয়. নির্মমতার প্রলেপ মাখানো, কিন্তু গভীরে অনেক বেশি গভীর দুঃখ. রণদীপ এ পর্ষন্ত যতগুলি ছবিতে অভিনয় করলেন, প্রত্যেকটিতেই তাঁর এই দৃষ্টিটুকু খুব যত্ন করে ব্যবহার করা হয়েছে. এই চরিত্রের জন্য তিনি ডিকশন রপ্ত করেছেন. এত বেশি সাবলীল যে কখনও কখনও ভুলেই যেতে হয় যে আগে ইনি অন্য কোনও চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন.
আলিয়া-রণদীপ জুটি কোনওদিন স্ক্রিনে সম্ভব এটাও ভাবা যায়নি. প্রেম, অ্যাকশন, রোম্যান্স, কমেডি, কোনও নিক্তিতেই মাপা যাবে না এই সম্পর্কটাকে. তবু এঁদেরই একটা অদ্ভুত অ্যাকসেপট্যান্স তৈরি হয়ে গেল দর্শকের কাছে. বিয়ের রাতে বাড়ি থেকে পালানো এক কিশোরীর সঙ্গে গ্যাং লিডারের সম্পর্ক বললে কোথাও অতিসরলীকৃত হয়ে যায়. বরং হাইওয়ে দিয়ে চলতে থাকা ট্রাকের মধ্যে দুটি ভিন্ন-ভাবে বড় হওয়া অন্তরের একটা সম্পর্ক পাপড়ি মেলে. খুব শিথিল, স্পর্শকাতর একটি প্রেম. এক জীবনের সঙ্গে অন্য এক জীবনের সন্ধি. রাস্তাই যাদের রাস্তা দেখায়.
এ আর রহমানের মিউজিক প্রায় নেশার মতো চেপে বসে. প্রথম প্রথম অতটা খেয়াল করা যায় না, ছবি দেখা শেষ হলে বোঝা যায়, কতখানি গভীরে চলে গিয়েছে এর শিকড়. আলিয়া ভাটের সুরেলা কণ্ঠেও একটি গান আছে. যে কোনও দিন তিনি গায়িকা হিসেবেও প্রচুর প্লেব্যাক করতে পারেন. রীতিমতো রেওয়াজি গলা. তবে এ আর রেহমানের স্বকণ্ঠে গানটিতে এক্সপেরিমেন্টেশন শুনতে তেমন ভাল লাগে না. শিল্পীর কণ্ঠস্বরেও একট যেন ক্লান্তি আছে. হাইওয়ে ছবিটি খুলে দেয় এক অন্য জীবনের দ্বার. নিয়ে যায় অন্য এক অনুভূতির স্বর্গে. জীবনদর্শন পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই ছবি. ইমতিয়াজের সিন্দুকের অন্যতম সেরা মুক্তো হিসেবে সঞ্চিত থাকবে এই ছবি.
First Published: Thursday, February 27, 2014, 21:31