পেট্রোল ইস্যুতে মমতার মিছিল, কটাক্ষ বাম-বিজেপি, কংগ্রেসরও

পেট্রোল ইস্যুতে মমতার মিছিল, কটাক্ষ বাম-বিজেপি, কংগ্রেসরও

পেট্রোল ইস্যুতে মমতার মিছিল, কটাক্ষ বাম-বিজেপি, কংগ্রেসরও পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেল কোম্পানিগুলির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবার যাদবপুর থানা থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিল করে কেন্দ্রে প্রধান সহযোগী দল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মিছিলে পা মেলান প্রচুর তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল করলেও তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নীরব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে তাঁর মিছিল ঘিরে নানা মহল থেকে উঠেছে প্রশ্ন। মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচিকে এদিন সকালেই সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়ানোর রাজনীতি বলে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেসনেত্রী দীপা দাশমুন্সি। ওদিকে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, "ঠিক কার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ?"  

বৃহস্পতিবার থেকে রাতারাতি পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি সাড়ে সাত টাকা বাড়িয়ে দেয় তেল কোম্পানিগুলি। একধাক্কায় জ্বালানি তেলের এই বেনজির মূল্যবৃদ্ধির দায় প্রথমে ঘাড়ে নিতে চায়নি কংগ্রেসও। বিরোধিতায় ৩০ মে প্রতিবাদ দিবস পালনের কথা ঘোষণা করে বাম দলগুলি। একই দিনে ভারত বন্‍‍ধের ডাক দেয় বিজেপি। বিরোধী দলগুলি তো বটেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস ও ডিএমকে-র মতো ইউপিএ-র শরিক দলগুলিও। পেট্রোলের বর্ধিতমূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবারই পথে নামে তৃণমূল। শনিবার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মহামিছিলের ডাক দেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পূর্বঘোষণা মতো শনিবার বিকেল পাঁচটায় যাদবপুর থানার সামনে থেকে শুরু হয় মিছিল। দলনেত্রী উপস্থিত থাকায় মিছিলে ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলে পা মেলান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। হাজরা মোড়ে শেষ হয় মিছিল। `পেট্রোলের বর্ধিত মূল্য মানছি না` স্লোগান ওঠে মিছিলে। কিন্তু মিছিল শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সুর ছিল অনেকটাই নরম। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একটি বাক্যও খরচ না-করে রবিবার কর্মীদের বুথে বুথে সভা ও মিছিল করার নির্দেশ দেন তিনি।
 
মিছিলের পর মুখ্যমন্ত্রীর এই মৌনতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা দানা বেঁধেছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ-র জোট শরিক। পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সেখানে কেন হাজির থেকে প্রতিবাদ জানালেন না রেলমন্ত্রী মুকুল রায়? কংগ্রেস নেত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সির অভিযোগ, সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়ানোর রাজনীতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একধাপ এগিয়ে অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, "পেট্রোলের দাম পছন্দ না-হলে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিক তৃণমূল।"

শুধু এরাজ্যের কংগ্রেস নেতারাই নন, নাম না করে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারিও। তিনি বলেন, "সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য গণতন্ত্রের গরিমা, গণতন্ত্রের সীমারেখা লঙ্ঘন করা উচিত নয়।" ফলে এই ইস্যুতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যে প্রদেশ কংগ্রেসের পাশে আছে তা একপ্রকার স্পষ্ট। বিজেপির অভিযোগ, রাজনীতিতে দ্বিচারিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলের কড়া সমালোচনা করেছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। এদিন সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদে এক সভায় তিনি বলেন, "এনডিএ জমানায় পেট্রোলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব এসেছিল। ইউপিএ টু সরকারের আমলে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হয়। দুটি সরকারেই শরিক ছিল তৃণমূল। ফলে পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির দায় কোনও ভাবেই এড়াতে পারে না তৃণমূল।" রাজনৈতিক মহলের মতে, পেট্রোলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে জনরোষ তৈরি হয়েছে। তা থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়েই পথে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


 

First Published: Saturday, May 26, 2012, 21:51


comments powered by Disqus