Last Updated: Friday, January 4, 2013, 15:23
মোদ্দা কথা, আমরা গেমটা হেরে গেছি দাদা। সবংশে হেরে গেছি। ফেসবুকে ঘুরছে মৃত্যুমুখী সুন্দরীর মুখ। এ ঘুমোনো মেয়ে পৃথিবীর। এরে লয় শুষে- দেবতা, গন্ধর্ব, নাগ, পশু ও মানুষে। ততোধিক সুন্দর তার কোটরে বসে যাওয়া রক্তচোখ, পচে যাওয়া নাড়িভুঁড়ি, লোহার রডের আদরে বিকল হতে থাকা শরীরযন্ত্র। সারা দেশ জুড়ে এই অনাম্নী অঙ্গনার জন্য প্রতিবাদে সোচ্চার, বিদ্রোহে উত্তাল জনগণ। মোমবাতির নৈঃশব্দে সরব তারকারা। ধর্ষকের শাস্তি চাই। প্রকাশ্য রাস্তায় ফাঁসি চাই। ন্যাংটো করে প্যারেড করাতে চাই, ইঁট ছুড়ে ছুড়ে মারতে চাই, চাই চাই... পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। এমন শাস্তি চাই যেন নিদর্শন হয়ে থাকে। ওই তো শুয়োরের বাচ্চারা... ওরাই তো রেপ করেছিল না? ধরে আন ব্যাটাদের। আইন আইনে থাকুক। আমরা ওদের জবাই করি। ওদের মধ্যে নাকি একটা নেহাত গোঁফ-ওঠা ছোকরা? তাতে কী... পুরুষ পুরুষ। ওদের অত শ্রেণিবিভাগ হয় না। নরম ছিদ্রে গাড়ির পার্টস ঢুকিয়ে মজা মারতে সবাই সমান। ভাবনা, রাগ, দুঃখ আর ঘেন্না মনের মধ্যে এমন কিলবিল করছে যে উগরে না দেওয়া অবধি স্বস্তি নেই। বড় দেরি হয়ে গেল কলম তুলতে। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালেই জীবনযুদ্ধ শেষ। থার্টিফার্স্ট নাইট পেরিয়ে নিউ ইয়ার এসে গিয়েছে। কাঁদো দেশ কাঁদো। কেঁদে তোমাদের আবেগের নদীতে প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ডগুলো ফেলে দাও। ধর্ষণ আর হেডলাইন নেই। সাইডলাইনে চলে এসেছে। এক কলমে সেরে দেওয়া হয়েছে। ইস্যু বদলে গেছে। নেতায়-নেতায় ইয়ে হচ্ছে, জীবন বয়ে যাচ্ছে। ধর্ষিতারা পুলিসে কমপ্লেন করতে গিয়ে ফের হেনস্থা হচ্ছে। মেডিক্যাল টেস্টে ধর্ষণের কিচ্ছুটি প্রমাণ মিলছে না। গায়ে একটি আঁচড়ও দেখা যাচ্ছে না আতশকাঁচে। 'প্রেক্ষিত' পাল্টে যাচ্ছে, কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না। এমনই শোকেসে সাজানো ঘটনা হয়ে যাচ্ছে... বাড়ির বাচ্চা প্লাস্টিকের ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে ধোনি-ধোনি খেলতে খেলতে মাকে শুধোচ্ছে, মা, মা ধর্ষণ কী করে খায়?